ফিলিস্তিনের গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরাইলের নৃশংস হামলা চলছে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত ও অনাহারে আছে অসংখ্য মানুষ।
ইসরাইলি বর্বরতায় গাজা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হলেও এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা ছিল ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাহমুদ আব্বাসের। এর জেরে তার বিরুদ্ধে বাড়ছে সমালোচনা।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের লড়াই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অনুপ্রেরণা: উপদেষ্টা নাহিদ
এছাড়া ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচনের আয়োজন করেননি তিনি। এ নিয়ে খোদ ফিলিস্তিনিদের মধ্যেও রয়েছে চাপা অসন্তোষ। এর মধ্যেই কয়েকদিন আগে আচমকা নিজের উত্তরসূরি হিসেবে রাওহি ফাত্তৌহ'র নাম ঘোষণা করেন আব্বাস।
জানা গেছে, মাহমুদ আব্বাস যদি অসুস্থতার কারণে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তখন রাওহি ফিলিস্তিনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তী নির্বাচনের আগপর্যন্ত ৯০ দিনের জন্য এ দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। রাওহি ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের স্পিকার। ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পরও একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর মাহমুদ আব্বাস কেন হঠাৎ নিজের উত্তরসূরি বেছে নিলেন, এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর চাপে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: জরিপ /মার্কিন-ইহুদি তরুণদের ৩৭ শতাংশ হামাস সমর্থক
গেল সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বা পিএকে প্রায় ছয় কোটি ডলার অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় রিয়াদ। সেই অর্থের শেষ কিস্তি এক কোটি ডলার দেয়ার বিনিময়ে আব্বাসকে নিজের উত্তরসূরি বেছে নেয়ার শর্ত দিয়েছিল সৌদি সরকার। এমনটাও জানিয়েছে আলজাজিরা।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে ফাতাহর এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা জানান, আব্বাসের এ সিদ্ধান্তের পেছনে দুইটি কারণ আছে। প্রথমত, যুদ্ধের পর গাজার বেসামরিক বিষয়গুলো পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। আব্বাস সে কমিটি ঘোষণা করলেও এতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কোনো প্রভাব থাকবে না।
আর দ্বিতীয়ত ট্রাম্প প্রশাসনের ইসরাইলের ভূখণ্ডের সঙ্গে পশ্চিম তীর বা এর কিছু অংশ যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পিএর বিশেষ কোনো প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: হামাস-হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার মিশনে ইসরাইল
ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে আব্বাসের প্রভাব কতটা
ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে আব্বাস তার নিজ বলয় এবং ঘনিষ্ঠ মহলের মধ্যে এখনও ক্ষমতাধর। তিনি এখনও ফাতাহ দলের প্রধান। ফাতাহ সবচেয়ে বড় এবং পুরোনো ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল।
এরই মধ্যে ফাতাহর কেন্দ্রীয় কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে মাহমুদ আল-আলোউলকে বেছে নিয়েছেন তিনি। আব্বাসের পর দলের নেতৃত্ব দেবেন আলোউল।
আরও বড় বিষয় হলো আব্বাস পিএলওর প্রধান। স্বাধীনতাকামী এই সংগঠন পিএর চেয়ে শক্তিশালী। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে দেনদরবার করে এবং তাদের পক্ষে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাহানি মুস্তাফার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পিএলওর সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল-শেখকে সংগঠনের পরবর্তী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন আব্বাস।