মামলা-জরিমানাতেও থামছে না খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটা

১ সপ্তাহে আগে
খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটা নিয়ে একের পর এক মামলা ও জরিমানা আদায় করা হলেও থামানো যাচ্ছে না পাহাড় খেকোদের অপতৎপরতা। দিনে-রাতে অব্যাহতভাবে কাটা হচ্ছে পাহাড়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পাহাড় ধসে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পরিবেশ আইন অমান্য করে জেলা সদরের জেলা পরিষদের হর্টিকালচার পার্কের পাশে উপজাতীয় কর্মকর্তা হাউজিং সমিতির প্রবেশমুখে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে পাহাড়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে পড়লে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-ফেনী-ঢাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

 

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন, বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার, ইটভাটা ও বাণিজ্যিক কাজের জন্য পাহাড়ের মাটি ট্রাকে করে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। মাঝে মাঝে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও জেল দিলেও আবার নতুন করে শুরু হয় কাটা।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সদরের জেলা পরিষদ পার্ক, গঞ্জপাড়া, পৌর শহরের সবুজবাগ, উত্তর সবুজবাগ, শালবন, কুমিল্লা টিলা, মাইচছড়ি, দীঘিনালা, বন বিহার সংলগ্ন এলাকা, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে। দীঘিনালার বোয়ালখালী মৌজার হেডম্যান ত্রিদীপ রায় পোমাং বলেন, ‘একটি চক্র আইনের তোয়াক্কা না করে দেদারছে পাহাড় কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করছে। এতে বর্ষায় পাহাড় ধসে আশপাশের গ্রামগুলো হুমকির মুখে পড়ছে।’

 

উপজাতীয় কর্মকর্তা হাউজিং সোসাইটির পাহাড় কেটে বাণিজ্যিক প্লট তৈরির অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা বিপাশা দেওয়ান ও জমির মালিক মো. ইছাক।

 

আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

 

পাহাড় কাটা বন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরাও। পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষায় পার্বত্য জেলায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করায় দেদার চলছে এ অপতৎপরতা। অবিলম্বে বন্ধ না হলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকি তৈরি হবে। উন্নয়নের নামে পাহাড় না কেটে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই।’

 

প্রশাসন বলছে, পাহাড় কর্তনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাছান বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাহাড় কর্তনের দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও পাহাড় কাটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

পরিবেশ অধিদফতরের খাগড়াছড়ি সহকারী পরিচালক হাসান আহমদ জানান, সম্প্রতি পাহাড় কাটার ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে এবং দুটি ঘটনায় ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে। একজনকে জেলও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাহাড় কাটা রোধে অধিক গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

 

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘পাহাড় কাটার ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদের দণ্ড দেয়া হয়েছে। অনেক সময় স্ক্যাভেটরও জব্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।’

 

তিনি আরও জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জেলার ২০টি স্থানে জরিমানা ও দণ্ড দেয়া হয়েছে এবং প্রায় ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবুও চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে অসংখ্য পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন