সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরের ঘটে এ ঘটনা।
ঘটনার শিকার নারী (৩০) ওই গ্রামের বাসিন্দা। পরে রাত ১০টার দিকে এসব ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ভাইরাল হয়। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে ওই নারী প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এবং বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। এরপর ওই নারীর স্বামী তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এরপর স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েক শত নারী পুরুষ রাত ৮টার দিকে ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে নিয়ে ফের রিপনের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং ব্যাপক মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেন। পরে সেখানে তার স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসায় শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম।
সালিশে ওই নারীর দুইটা গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনি। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন। মাথার চুল কাটা রয়েছে।
আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতনে ব্যর্থ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল
এ সময় আহত ওই নারী বলেন, ‘রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বিকেলে তাকে ডাকতে গেলে তার স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। মুক্তি ও পারভিন চুলকেটে দিয়েছে। বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
এদিকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক শত জনগণ ওই নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এ সব দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন।
মির্জাপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ঘরের ভিতরে আসবাবপত্রে ভাঙচুরের ক্ষত। গোয়ালঘরে নেই গরু ছাগল।
এ সময় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, ‘ ওই নারীর ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। তার ভাষ্য, সে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নয়।’
রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, ‘আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা চর মারিছি। কিন্তু কারা চুল কেটেছে তা জানি না।’
অভিযুক্ত কাশেম বলেন, ‘ওই নারী বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু, ছাগল নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বিষয়ে মেম্বারের সঙ্গে কথা বলুন।’
গরু ও ছাগলের কথা অস্বীকার করেছেন শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় চুরির অভিযোগে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কী ঘটেছে তা জানি না।’
যেকোনো ঘটনায় আইন হাতে তুলে নেয়া ঠিক নয় বলে জানালেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ।
তিনি বলেন, ‘চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে রাতেও ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম ও তার স্বজনদের পাইনি পুলিশ। তবে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’