তবে দুঃখজনকভাবে, এ দিনকে কেন্দ্র করে অনেক অঞ্চলে শরীয়তবিরোধী বিদআতি কার্যকলাপ ও কুসংস্কারমূলক আচরণ প্রচলিত হয়ে গেছে। ইসলামের নির্ভরযোগ্য উৎসসমূহ থেকে জানা যায়, এসব কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না বরং তা শিরক, বিদ‘আত ও গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। নিচে মহররম মাসে প্রচলিত কিছু বর্জনীয় কাজ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
বর্জনীয় কাজসমূহ
১. তাযিয়া বানানো ও তা কেন্দ্র করে মিছিল: হজরত হুসাইন রা. এর নাম ব্যবহার করে তার নকল কবর বানিয়ে তাযিয়া তৈরি করা এবং এটিকে সম্মানের প্রতীক বানিয়ে নানা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া যেমন, নজর-নিয়ায পেশ করা, পতাকা টাঙানো, মিছিল করা ইত্যাদি, এগুলো ফাসেকী ও শিরকী কাজ।
২. মর্সিয়া পাঠ ও শোকগাথার মজলিস: শোক প্রকাশের নামে মর্সিয়া বা বিলাপ গীতি পাঠ করা এবং এ উপলক্ষে মজলিস আয়োজন করা শরীয়তসম্মত নয়।
আরও পড়ুন: আশুরার রোজা কয়টি রাখতে হয়?
৩. বিলাপ ও মাতম: হায় হুসেন, হায় আলী বলে চিৎকার করা, নিজ শরীর রক্তাক্ত করা ইত্যাদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিন্দিত কাজ হিসেবে বিবেচিত।
৪. শহিদদের উদ্দেশ্যে পানি/শরবত বিতরণ: আশুরার দিনে কারবালার শহীদদের তৃষ্ণা স্মরণে পানি বিতরণ করাও শরিয়তের অনুমোদিত নয়।
৫. খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ: আশুরার দিনে খিচুড়ি রান্না করে আত্মীয়স্বজন বা গরিব-মিসকীনদের খাওয়ানো—এটিকে একটি ধর্মীয় রীতি হিসেবে পালন করাও বিদ‘আত।
৬. ভিক্ষাবৃত্তিতে ছোট বাচ্চা নিযুক্ত করা: হুসাইন রাযি.-এর বরকতে সন্তান দীর্ঘায়ু হবে এই বিশ্বাসে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করানো একটি কুপ্রথা।
৭. বাদ্যযন্ত্র বাজানো: তা’যিয়ার সঙ্গে ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করাও গুনাহের কাজ।
৮. শোক পালন: শরিয়তে স্বামীর মৃত্যু ছাড়া অন্য কারণে দীর্ঘকালীন শোক পালন অনুমোদিত নয়। আশুরার শোকানুষ্ঠান এ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত নয়।
৯. বিশেষ কালো/সবুজ পোশাক পরা: শোক জানানোর জন্য নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরিধানও শরীয়তসম্মত নয়।
১০. জাল হাদিস প্রচার: আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরতে গিয়ে জাল হাদীস প্রচার করা হারাম ও ভয়ংকর গুনাহ।
মহররম মাস ও আশুরা আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় ও শিক্ষনীয় একটি অধ্যায়। এটি আমাদের জন্য আত্মসংযম, ত্যাগ ও সত্যের জন্য অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়। কিন্তু এ উপলক্ষে শরীয়তবিরোধী বিদআত, কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের মাধ্যমে ইসলামের পবিত্র ভাবমূর্তি নষ্ট করা চরম দুঃখজনক।
অতএব, এ মাসে এমন কিছুই করা যাবে না যা কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে প্রমাণিত নয়। আমাদের সকলের উচিত, কেবলমাত্র প্রমাণিত আমলগুলো পালন করা এবং সকল শিরক, বিদআত ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
]]>