মর্গে ইঁদুরে খেয়েছে মৃত ব্যক্তির চোখ, স্বজনরা বলছেন ‘চুরি’

২ সপ্তাহ আগে
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে এক মৃত ব্যক্তির চোখ চুরির অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা। জমিজমা নিয়ে বিরধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। আগে তার চোখ ভালো থাকলেও পোস্টমর্টেমের সময় চোখ ছিল না বলে দাবি পরিবারের। সরকারি হাসপাতালের মর্গে এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

হাসপাতালের দায়িত্বরতরা বলছেন, মর্গে লাশের দুই চোখ খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর। এ ঘটনাটি নগরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।


অভিযোগ রয়েছে, রমেকের মর্গে নেই ফ্রিজিং ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে মৃতদেহ সংরক্ষণের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ নেয়নি কার্যকর পদক্ষেপ। ঘটনাটি তদন্তের দাবি স্বজনদের।


জানা যায়, নগরীর বুড়িরহাট বাহারদুর সিংহ জিপেরপার গ্রামের নাসিম উদ্দিনের ছেলে মাসুম মিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয় শ্যালক সাইদুরের সঙ্গে। এসময় সাইদুরের লোকজন মাসুম মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে আহত মাসুমকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

আরও পড়ুন: কমলাপুরে আবাসিক হোটেল থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে মারুফা বেগম বাদী হয়ে সাইদুরসহ ৩ জনকে আসামি করে পরশুরাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হিমঘরে রেখে দেয়।
 


বুধবার (২৮ মে) দুপুরে পোস্টমর্টেমের সময় দেখা যায়, মরদেহের দুটি চোখ নেই। এতে হতবাক হয়ে পড়েন স্বজনরা। মেডিকেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিচার দাবি করেছেন মৃতের স্বজনরা। এত বড় একটি সরকারি হাসপাতালে মরদেহ সংরক্ষণের করুণ অবস্থা, এ ঘটনার জন্য দায়ী বলে তারা মনে করেন। এনিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


নিহতের ভাগিনা রাকিব বলেন, ‘গতকাল পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মারামারির ঘটনায় গুরুতর আহত হলে খালুকে(নিহত মাসুম) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সকাল ১০ টায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ১১ টার দিকে খালু মারা জান। তারপর বিভিন্ন সমস্যার কারণে গতকাল ময়নাতদন্ত করা হয়নি। আজ মর্গ থেকে লাশ বের করার সময় দেখি চোখ দুটো নাই। আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না। এটার বিচার চাই আমরা।’


নিহতের প্রতিবেশী আব্দুল জলিল বলেন, ‘মৃতদেহ সংরক্ষণ ব্যবস্থা আদিম যুগকেও হার মানিয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ চুরি হয় শুনেছি। এখন লাশের চোখও চুরি হচ্ছে। এখানে লাশ রাখাও নিরাপদ নয়। চোখ চুরির ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি হাসপাতালের বেহাল মর্গটি কেন সংস্কার করা হয় না, এর জবাব কার কাছে আমরা চাইব।’ 


মেডিকেল মর্গের দায়িত্বে থাকা সর্দার অফিসের কর্মকর্তারা ভারপ্রাপ্ত পরিচালককে দায়ী করেন। বারবার বলার পরেও মর্গের সুরক্ষা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সর্দার রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন বলেন, হাসপাতালের হিমঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। লাশের দুটি চোখ খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর।

আরও পড়ুন: হাতিরঝিলে পড়ে ছিল অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মরদেহ

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক ইসলাম বলেন, হিমঘরে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। প্রায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।


রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালককে আ. এ. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাপারটি আসলেই দুঃখজনক। রুমের ভেতর লাশ থাকে, রুমের ভেতর থাকা অবস্থায় যেহেতু ব্যাপারটা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত না করা পর্যন্ত সঠিক কারণ বলতে পারবে না। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত কারণ বের করা হবে। ফ্রিজিংয়ের ব্যাপারে আমরা বহুবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। এটার ব্যাপারে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি।’


রংপুর মেট্রোপলিটন পরশুরাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সুরতহালের সময় লাশের চোখ ঠিক ছিল। এখন দেখছি নাই। কী কারণে লাশের চোখ ছিল না, তা তদন্ত করা হচ্ছে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন