মধুখালীতে স্বাস্থ্যখাত নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট, চাঁদা না দেয়ায় ক্লিনিক ভাঙচুর

১ সপ্তাহে আগে
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণে নেমেছে একটি সিন্ডিকেট। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চিকিৎসকদের নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধ লেখাতে বাধ্য করছেন চক্রটি।

এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ইমতিয়াজ হোসেন অর্ক নামে এক চিকিৎসকের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে। এমনকি ভাঙচুর করা হয় ওই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার একতা ডায়াগনস্টিক এন্ড ইমেজিং সেন্টার।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই চক্রের মধ্যে রয়েছে- মধুখালী পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রজব ইসলাম রনি, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিকাঈল বিশ্বাস ও রিয়ান রহমান নয়ন এবং নাহিদুর রহমান অপু ও টুটুল বিশ্বাস নামে আরও দুই ছাত্রদল কর্মী। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা তোলার দায়িত্বে রয়েছেন নাহিদুর রহমান অপু। তবে নাহিদুর রহমান দাবি করেন, টাকা তুলেন বড় বড় পদধারীরা।

 

জানা যায়, চাঁদা না দেয়ায় গত ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একতা ডায়াগনস্টিক এন্ড ইমেজিং সেন্টারে হামলা চালায় চক্রটি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মালিক তানভির ইসলাম শুভ ও চিকিৎসক ইমতিয়াজ হোসেন অর্ককে মারধর করেন এবং প্রতিষ্ঠানটিতে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়।

 

ওই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশ করে নাহিদুর রহমান অপু। কিছুক্ষণের মধ্যে বের হয়ে বাইরে থাকা একটি মোটরসাইকেলে সজোরে লাথি মারেন। এরপর মোবাইলের মাধ্যমে কয়েকজনকে ফোন দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হয় রজব ইসলাম রনি, মিকাঈল বিশ্বাস, রিয়ান রহমান নয়ন ও টুটুল বিশ্বাস সহ বেশ কয়েকজন।

 

এরপরই ভেতরে প্রবেশ করে তানভির ইসলাম শুভকে টেনেহেঁচড়ে ও কিল-ঘুষি দিতে দিতে বাইরে নিয়ে আসেন। ওই সময় বাঁধা দিতে গেলে চিকিৎসক ইমতিয়াজ হোসেন অর্ককেও এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করেন।

 

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ক্লাইমেট অলিম্পিয়াডে অংশ নিলো অর্ধশত শিক্ষার্থী

 

এ ঘটনার দুদিন পর ১৩ মে উল্লেখিতদের আসামি করে ফরিদপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৪নং আমলী আদালতে মামলা করেন ইমতিয়াজ হোসেন অর্ক। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে বৈকালিক চেম্বার করলেও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

 

ইমতিয়াজ হোসেন অর্ক বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি মধুখালী উপজেলা হওয়ায় আমি ওই প্রতিষ্ঠানে বৈকালিক চেম্বার করে থাকি। কিছুদিন আগে চক্রটির সদস্য নাহিদুর রহমান অপু বিভিন্ন সময় এসে দুইলাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং বলেন, এখানে প্রাক্টিস করতে হলে মাসিকভাবে টাকা দিতে হবে। এছাড়া তাদের নির্ধারিত কোম্পানির ওষুধ লিখে দিতে হবে বলে জানিয়ে দেন। এসবের অস্বীকৃতি জানালে এবং প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর হামলা করেন এবং ভাঙচুর চালায়।

 

তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন নিম্নমানের ওষুধ কোম্পনির সাথে কমিশন চুক্তি করে সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সকল বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রবেশ করে সরাসরি চিকিৎসকদের তাদের নির্ধারিত কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য হুমকি দিয়ে যান। এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে দুই হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা তুলে থাকেন।

 

এই চিকিৎসক আরও জানান, চক্রটি কিছুদিন পূর্বে পার্শ্ববর্তী সালেহা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও হামলা ও ভাঙচুর চালায়। সনোল্যাব নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে যান।

 

তবে এসব নিয়ে মুখ খুলতে চাননা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ। সালেহা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আব্দুল হাকিম বলেন, আমার এখানে স্থানীয় কিছু পোলাপানের সাথে ঝামেলা হয়েছিল। তবে তখনই বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। তবে কারা হামলা করেছে সে বিষয়ে এড়িয়ে যান তিনি।

 

এছাড়াও সম্প্রতি মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জ্ঞানব্রত শুভকে নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য ওই চক্রের এক সদস্য হুমকি দেন বলে তিনি জানান। তাদের কোম্পানির ওষুধ কেন লিখে নাই বলেও জানতে চায় চক্রটি।

 

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবক নিহত

 

চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদুর রহমান অপু অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি রিপ্রেজেন্টিভ হিসেবে কাজ করি, আমি চাঁদা তুলব কেন। প্রতিমাসে ১০ হাজার থেকে আট হাজার টাকা করে চাঁদা তোলেন বড় বড় কয়েকটি পদের নেতারা। ভাই-ব্রাদারের স্বার্থে আমি তাদের নাম বলব না। এছাড়া তিনি ক্লিনিকগুলোতে হামলার কথা স্বীকার করেন।

 

অপু আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙচুর ও লুটপাট থেকে আমিই রক্ষা করেছিলাম। মোটরসাইকেল চাওয়াকে কেন্দ্র করে ওই ডাক্তার আমাকে গালিগালাজ করে। এরপর আমার বন্ধু-বান্ধবদের ফোন দেই।

 

এদিকে চক্রটির দলীয় পরিচয় এবং হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা নিশ্চিত করে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. সাদ্দাম বিশ্বাস বলেন, তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি আমরা জেলা কমিটিকে জানিয়েছি। কারণ, দলের যারা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে এবং নিজেদের স্বার্থের জন্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে আজ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দালালমুক্ত করেছি। 
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন