ভোলায় স্বামীকে আটকে মারধর, স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ

৫ দিন আগে
ভোলার তজুমদ্দিনে এক গৃহিণীকে গণধর্ষণ এবং চাঁদার দাবিতে গৃহিণীর স্বামীকে মারধর ও নির্যাতন করেছেন স্থানীয় শ্রমিকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ওই গৃহিণীর স্বামী বাদী হয়ে শ্রমিকদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। মামলার পর এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে।

গত রোববার (২৯ জুন) রাতে তজুমদ্দিন উপজেলা সদরের কামাড়পট্টিতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার স্বামী মো. রুবেলের বাড়ি উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নে। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন। কাজ করেন একটা হোটেলে। দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা বেগম থাকেন তজুমদ্দিনে। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ চলছিল।

 

রুবেল জানান, গত শনিবার (২৮ জুন) ঝর্ণা বেগম তাকে ফোন করে তজুমদ্দিন বাজারের কামাড়পট্টিতে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। এর আগে আগে উপজেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন ও তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক রাসেল আহমেদ ও কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সজিবসহ আরও বেশ কয়েকজনকে ভাড়া করে আনেন ঝর্ণা। রুবেল দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা মতো গ্রামে যান। 

 

রুবেলের অভিযোগ, কামাড়পট্টিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটকে ফেলা হয়। এরপর উপজেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, তার সহযোগী আলাউদ্দিন, কলেজ ছাত্রদল আহবায়ক রাসেল আহমেদ তাকে ব্যাপক মারধর করেন এবং চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

 

আরও পড়ুন: সাবমেরিন ক্যাবল কেটে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী, টানা তিনদিন বিদ্যুৎহীন দ্বীপবাসী

 

হোটেল শ্রমিক রুবেল টাকা দিতে অপারগতা জানালে তারা তার প্রথম স্ত্রীকে ফোন করে চাঁদার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। পরদিন রোববার (২৯ জুন) বেলা ১১টার দিকে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন প্রথম স্ত্রী। কিন্তু এত কম টাকা দেখে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়। এবার স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই আটকে অত্যাচার-নির্যাতন চালায়।

 

ভুক্তভোগী প্রথম স্ত্রীর অভিযোগ, দুপুর ১২টার দিকে তার স্বামীকে (রুবেল) চা খাওয়ানোর কথা বলে জোরপূর্বক ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনজনে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ‘ভাই’ ডেকেও ছেড়ে দিতে বললেও তাদের মন গলেনি বলেও জানান ওই নারী। এরপর বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ না করার শর্তে বিকেলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

 

শারীরিক নির্যাতনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই নারী। বাড়ি ফিরে এদিন সন্ধ্যায় দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে আত্মহত্যা থেকে নিবারণ করেন। প্রতিবেশিদের সহায়তায় তিনি ওই রাতে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে বিষয়টি জানান। তজুমদ্দিন থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

 

সোমবার (৩০ জুন) তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোহাব্বত খান জানান, নির্যাতিতা নারীর স্বামী বাদী হয়ে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন। মামলার অভিযোগে তারা জানিয়েছেন, আলাউদ্দিন ও ফরিদ ধর্ষণ করে এবং একজন তাদের সহযোগিতা করে। এছাড়া মারধরের ঘটনায় আরও ৬/৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা যুবদলের ২ আহ্বায়কসহ তিন নেতা বহিষ্কার

 

নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সোমবার সন্ধ্যায় জেলা সদরে পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক জানান, তদন্তে ঘটনা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ঘটনায় একজনকে পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

 

তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক মো. রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি বিষয়টির কিছুই জানেন না। এটা তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু জানান, বিষযটি তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছেন।

 

তিনি আরও জানান, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের কাজে তারা সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন