এ ছাড়া তলিয়ে গেছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরিঘাটের দুটি গ্যাংওয়ে। সাগরকূলের চর কুকরি মুকরি, ঢালচরসহ মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী চরাঞ্চালগুলো প্রায় ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
অন্যদিকে দমকা হাওয়ার কারণে বুধবার রাত থেকে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করছে। বিদ্যুতের অভাবে ভেঙে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে ভোলা থেকে সব লঞ্চ-ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, রাত ৮টা পর্যন্তও চালু করা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, বিকেলে মেঘনার জোয়ার বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় ঢেউয়ের আঘাতে তজুমদ্দিন স্লুইসগেট এলাকায় নির্মাণাধীন রিং বাঁধের ১০ মিটার এলাকা ছুটে লোকালয়ে পানি ঢুকে যায়। জোয়ারের পানি সরাসরি খালে প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি বা ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ছুটে যাওয়া বাঁধ সংস্কারের জন্য সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বরিশালে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
তিনি আরও জানান, এ ছাড়া মনপুরার বেড়িবাঁধের বাইরে পুরানো রিং বাঁধের দুটি এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকেছে, যা মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি। তবে বাঁধ ছুটে যাওয়ার পরপরই তজুমদ্দিন উপজেলা সদরসহ স্লুইসগেটের আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিজান জানান, জোয়ারের পানি সরাসরি খালে ঢোকায় মানুষ রক্ষা পেয়েছে। না হলে বড় ধরেন ক্ষতির মুখে পড়তে হতো তাদের। যদি রাতের জোয়ারে এভাবে আরও পানি ঢোকে, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।
বিকেল ৪টায় দমকা বাতাসের সঙ্গে ঢেউয়ের আঘাতে সদর উপজেলার শিবপুর মাছঘাটে বেঁধে রাখা একটি জেলে ট্রলার দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় ঘাটের একটি দোকানঘরও ভেসে যায় বলে জানিয়েছেন আড়ত মালিক আরিফ।
তিনি আরও জানান, ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙনও বেড়ে গেছে। ঘাটের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক দোকানপাট সরিয়ে নিতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ ছাড়া ঢালচর ও চর নিজামে ৬টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। চরফ্যাশনের চেয়ারম্যান বাজার এলাকায় কয়েকটি গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরিঘাটের দুটি গ্যাংওয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। এতে গাড়ি পন্টুনে ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি গাড়ি পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল।
এদিকে বুধবার রাত থেকেই জেলাজুড়ে চরম বিদ্যুৎবিভ্রাট চলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকায় ভেঙে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। জেলা ও উপজেলা সদরে বসবাসকারীদের পানির অভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানান, ঝড়ো বাতাসের কারণে বিদ্যুৎ লাইনগুলো ঘনঘন ট্রিপ করছে। লাইনের পাশের গাছপালা তারের ওপর পড়লেই লাইন বন্ধ হয়ে যায়। অতি বৃষ্টির কারণে বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তাদের কর্মীরা বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও কাজ করছেন।