তাহাজ্জুদ নামাজ
ভোরের প্রথম প্রহরে নবীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল ছিল তাহাজ্জুদ নামাজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,
আর রাত্রির একাংশে তাহাজ্জুদ পড়ুন। এটি আপনার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। হতে পারে, আপনার প্রভু আপনাকে প্রশংসিত স্থানে উত্তীর্ণ করবেন (সুরা বনি ইসরাইল ৭৯)। রসুলুল্লাহ (সা.) এ নামাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, সাহাবাদেরকেও এ আমলের প্রতি উৎসাহিত করতেন।
আল্লাহর স্মরণ (জিকির)
নবীরা ভোরে নিয়মিত আল্লাহর জিকর করতেন। এটি ছিল তাদের দিন শুরুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সকালে ও সন্ধ্যায় তোমাদের প্রভুর গুণগান কর’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৪১-৪২)। রসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকর করতেন (মুসলিম, হাদিস ২৭৫৮)।
দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা
নবীরা প্রভুর কাছে দোয়া করতেন ও ক্ষমা চাইতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
তারা ফজরের সময় প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত (সুরা আয-জারিয়াত, আয়াত ১৮)। রসুলুল্লাহ (সা.) ভোরের এই সময়ে তার উম্মতের জন্য দোয়া করতেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় সফলতার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।
কোরআন তিলাওয়াত
ভোরে কোরআন তিলাওয়াত ছিল নবীদের অন্যতম বিশেষ আমল। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
আর ফজরের সময় কোরআন পাঠ করুন। নিশ্চয়ই ফজরের কোরআন পাঠের সাক্ষী হয় (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৮)। রসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত ফজরের নামাজের পর দীর্ঘ সময় ধরে কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
ফজরের নামাজের গুরুত্ব
ফজরের নামাজ নবীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে(মুসলিম, হাদিস ৬৫৭)। নবীরা ফজরের নামাজকে দিন শুরু করার সবচেয়ে মূল্যবান সময় হিসেবে দেখতেন আর তাদের উম্মতদেরও এই নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলতেন।
প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক
নবীরা ভোরের সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন এবং স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। তারা ফজরের পর প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতেন, যা তাদের আত্মার শান্তি এনে দিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের পর সাহাবাদের সাথে প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করতেন এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করতেন (বুখারি, হাদিস ৬১২১)।
নবীদের ভোরের আমলগুলো আমাদের জীবনের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ। তাহাজ্জুদ, জিকির, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং ফজরের নামাজের মাধ্যমে তারা তাদের দিন শুরু করতেন। এই আমলগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যুক্ত করলে তা আমাদের আত্মিক উন্নতি, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা নিশ্চিত করবে। নবীদের অনুসরণে আমাদেরও উচিত দিন শুরু করা ভোরের এই বরকতময় সময়ের ইবাদতের মাধ্যমে।