ঘরের মাঠে ইংলিশদের দম্ভ চূর্ণ করলেন সিরাজ। ওভালে পঞ্চম দিনে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে নায়ক বনে গেলেন ৩১ বছর বয়সী পেসার। জয়ের জন্য শেষ দিনে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫ রান, হাতে চার উইকেট। জয়ের পাল্লা ইংলিশদের দিকেই ঝুঁকে ছিল। কিন্তু এক স্পেলেই সিরাজ লণ্ডভণ্ড করে দিলেন ইংলিশ লোয়ার অর্ডারকে। একে একে ফেরালেন জেমি স্মিথ, জেমি ওভারটন ও গাস অ্যাটকিনসনকে। মাঝে জশ টাংকে বিদায় করলেন প্রসিধ কৃষ্ণা। ইংল্যান্ড হারল মাত্র ৬ রানে।
শুভমান গিলের নতুন যুগের ভারত ইংল্যান্ড থেকে ফিরছে সিরিজ ড্র করে। যে কৃতিত্বের অনেকটাই সিরাজের। ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০.১ ওভার বল করে ১০৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছেন সিরাজ। এর আগে প্রথম ইনিংসেও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৯ উইকেট শিকার করে ম্যাচের নায়ক তো তিনিই। এর আগে এজবাস্টনেও বল হাতে ভারতের প্রথম জয়েও নায়ক ছিলেন সিরাজ। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করে ইংলিশদের ধসিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছিলেন এক উইকেট।
মজার বিষয়, ভারত এই সিরিজে যে দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে, তার কোনোটিতেই ছিলেন না জাসপ্রিত বুমরাহ। সিরাজই ছিলেন বোলিং লাইনআপের অলিখিত নেতা। ভারতের একমাত্র পেসার হিসেবে সিরিজের পাঁচটি টেস্টই খেলেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের পক্ষেও পেসারদের মধ্যে শুধু ক্রিস ওকস খেলেছেন সবকটি টেস্ট, কিন্তু পঞ্চম টেস্টে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে চোট পাওয়ায় বল করেছেন মাত্র ১৪ ওভার। বলা যায় এই সিরিজে দলের বোলিং আক্রমণের বোঝা সিরাজের মতো আর কাউকেই টানতে হয়নি।
আরও পড়ুন: টেস্টে শতকের ইতিহাস গড়ল ইংল্যান্ড ও ভারত
পুরো সিরিজে দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৮৫.৩ ওভার বল করেছেন সিরাজ। ৩২.৪৩ গড়ে সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনিই। এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট পেলেন ওভালেও।
গতকাল হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ছেড়ে দেয়ার পর ম্যাচের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। ব্রুক-রুট জুটি ইংল্যান্ডকে জয় প্রায় এনেই দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতে গেলে ক্যাচ মিসের কারণে ভিলেন হতে হতো সিরাজকে। ক্যাচ মিস নিয়ে ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাচটা যখন ধরেছিলাম, তখন রোপ ছুঁইনি। ওটাই ম্যাচটা পাল্টে দিচ্ছিল। ব্রুক টি-টোয়েন্টি মোডে ব্যাটিং শুরু করে দেয়। ম্যাচটাতে পিছিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’
গতকাল বল হাতে সেভাবে প্রভাব না রাখতে পারলেও আজ কীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সিরাজ? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘উইকেট পাই আর না পাই, রান দিই আর নাই দিই, একটাই লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিলাম মাঠে, ঠিক জায়গায় রাখব বলটা। যাতে পাল্টা চাপ তৈরি করা যায়। আমি সব সময় নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছি, যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচ জেতাতে পারি। সেটাই করে দেখালাম।’
ওভালে ম্যাচসেরা হলেও অবশ্য সিরিজসেরা হতে পারেননি সিরাজ। এই পুরস্কার উঠেছে ৭৫৪ রান করা শুভমান গিলের হাতে। তবে ওয়াসিম জাফরের চোখে সিরিজসেরা এই পেসারই।
আরও পড়ুন: ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এমন নজির এবারই প্রথম
এক্সে ভারতের এই সাবেক ওপেনার লিখেছেন, 'শেষ অবধি লড়ে যাওয়া সৈনিক। আমার চোখে সিরিজের আসল নায়ক মোহাম্মদ সিরাজ। একমাত্র পেসার হিসেবে পাঁচটি টেস্টেই খেলেছেন এবং প্রতিটিতে একই রকম উদ্যম নিয়ে বল করেছেন—তা-ও এমন ব্যাটসম্যান সহায়ক কন্ডিশনে, যেখানে প্রতিটি ম্যাচই পূর্ণ দৈর্ঘ্য পর্যন্ত গিয়েছে। অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানাই তাকে।'
এদিকে হার্শা ভোগলে তো মনে করেন, সিরাজ ভারতের ক্রিকেট গাঁথায় মধ্যেই নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। এক্সে এই প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার লিখেছেন, 'ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। এটা এমন একটা মুহূর্ত যেখানে মোহাম্মদ সিরাজ ভারতের ক্রিকেটগাঁথায় ঢুকে পড়েছেন।'
সিরিজসেরার চেয়ে বড় সম্মানই পাচ্ছেন সিরাজ।