ভারত আসলে কয়টি বিমান হারিয়েছে, কীভাবে সেগুলো ভূপাতিত করল পাকিস্তান?

১৮ ঘন্টা আগে
২০১৯ সালে ভারতের একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তানে বিমানবাহিনী। একই সঙ্গে পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে গ্রেফতার করে। শত্রু দেশের হাতে পাইলট ধরা পড়ার পর ভারতের সাবেক সামরিক অফিসার থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা টিভি পর্দায় এসে বুক চাপড়ে বলেছিলেন, আজ আমাদের যদি রাফায়েলের মতো আধুনিক যুদ্ধ বিমান থাকতো তাহলে এই অবস্থায় পড়তে হতো না। কিন্তু সেই ঘটনার ছয় বছর পর আলোচিত সেই রাফায়েলই পাকিস্তানকে বিজয় উদযাপনের উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে!

২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, পুলওয়ামায় ভারতীয় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর সশস্ত্র হামলার পর পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। জবাব দিতে পাকিস্তানের এফ-১৬ এবং জেএফ-১৭ থান্ডার বিমান ভারতের আকাশসীমার দিকে যায়। পাকিস্তানের বিমান ঠেকাতে ভারত মিগ-২১ বাইসন বিমান পাঠায়। কিন্তু আকাশে ডগফাইটে ভারতীয় বিমানসেনারা পরাস্ত হন। পাকিস্তানের এফ-১৬ এবং জেএফ-১৭ ছিল চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। অপরদিকে ভারতের মিগ-২১ সোভিয়েত আমলের পুরনো প্রযুক্তির দ্বিতীয় প্রজন্মের যুদ্ধবিমান।


ওই ঘটনার পর ভারত ৪.৫তম প্রজন্মের রাফায়েল যুদ্ধবিমানকে দ্রুত নিজেদের বহরে যুক্ত করে।


'অপারেশন সিন্দুর' এর সময় ভারত আসলে কয়টি বিমান হারিয়েছে?


ভারতের যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন দাবি পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, ৬-৭ মে রাতে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর প্রতিক্রিয়ায় তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে; যার মধ্যে রয়েছে তিনটি ফরাসি নির্মিত রাফায়েল, রাশিয়ার তৈরি একটি মিগ-২৯ এবং একটি সু-৩০।


এদিকে ভারত সরকার পাকিস্তানের এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) একটি ফ্যাক্ট-চেকের মাধ্যমে জানিয়েছে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রচারিত রাফায়েল বিধ্বস্ত হওয়ার ছবি পুরনো এবং বর্তমান সংঘর্ষের সাথে সম্পর্কিত নয়।


তবে একজন ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিএনএন-কে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অন্তত একটি ভারতীয় রাফায়েল গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া, মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের জে-১০সি যুদ্ধবিমান অন্তত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে একটি রাফায়েল।


এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতেরই বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান পাঞ্জাবের ভাতিন্ডা এয়ারবেসের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজও চালিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং ৯ জন আহত হয়েছেন।

 

আরও পড়ুন: ৪০০ তুর্কি ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে পাকিস্তান, দাবি ভারতের


বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বিমান ধ্বংসের বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি প্রশ্নের মুখে পড়েন। জবাবে তিনি বলেন, যখন সময় হবে তখন এই সব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য জানানো হবে। অর্থাৎ বিমান বিধ্বস্তের কথা তিনি সরাসরি অস্বীকার করেননি।


অতএব পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রমাণ এখনো পর্যন্ত মেলেনি। তবে সংখ্যা যাই হোক এবারের আকশযুদ্ধেও ভারত যুদ্ধবিমান হারিয়েছে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। এরমধ্যে যে একটি রাফায়েলও আছে তাও আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করছে।


রাফায়েল কতটা ক্ষমতাসম্পন্ন?

 

রাফায়েল (Rafale) ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক ৪.৫-তম প্রজন্মের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। একে ভারতীয়রা বলেন রাফাল। ভারতের বিমানবাহিনীর অন্যতম প্রধান এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান এই রাফায়েল। এই বিমান একসঙ্গে আকাশ, স্থল এবং সমুদ্রে আক্রমণ করতে পারে। এছাড়া ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এবং নজরদারি করতে সক্ষম এটি।


ফ্রান্সের ডাসল্ট (Dassault Aviation) রাফায়েল তৈরি করে। ২০০১ সালে এই বিমান প্রথম সার্ভিসে আনে ফ্রান্স। ২০১৬ সালে ৩৬টি রাফায়েল কেনার জন্য চুক্তি করে ভারত। প্রথম ব্যাচ আসে ২০২০ সালে। এগুলো হরিয়ানার আম্বালা এবং পশ্চিমবঙ্গের হাশিমারা ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়।


রাফায়েলে কী আছে?

 

গতি: মাক ১.৮ (প্রায় ২,২০০ কিমি/ঘণ্টা)
রেঞ্জ: ৩,৭০০+ কিমি (ফেরি রেঞ্জ)
সর্বোচ্চ উচ্চতা: ৫০ হাজার ফুট

রাফায়েলের আধুনিক প্রযুক্তি:


* এইএসএ (AESA) রাডার (RBE2-AA): শত্রু বিমানের উপর অনেক আগে থেকেই নজর রাখতে পারে, জ্যাম হওয়া কঠিন।
* SPECTRA ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম: শত্রু রাডার বা মিসাইলকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এটি রাফায়েলের কিছুটা অদৃশ্য করে ফেলে।
* Stealth Features: পূর্ণ স্টেলথ না হলেও রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।
* Helmet Mounted Display: পাইলট চোখের দিকেই মিসাইল টার্গেট করতে পারে।

অস্ত্রসজ্জা


* Meteor (BVR মিসাইল): ১৫০+ কিমি দূর থেকে শত্রু বিমান ধ্বংস করতে পারে।
* MICA (IR ও RF গাইডেড): নিকটবর্তী ও দূরবর্তী আকাশযুদ্ধে কার্যকর।
* SCALP ক্রুজ মিসাইল: ৫০০+ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সক্ষম।
* Hammer স্মার্ট বোমা: নির্ভুলভাবে ভূমিতে আঘাত হানে।
* Exocet: জাহাজ ধ্বংসের জন্য।
* ৩০ মিমি কামান: আকাশযুদ্ধে, বিশেষ করে ডগফাইটের জন্য ব্যবহৃত হয়।


ভারতের জন্য রাফায়েল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 

রাফায়েল পাকিস্তানের বহরে এফ-১৬ এবং জেএফ-১৭ এর চেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী। এটি চীনের পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ বা এফসি-৩১ এর বিরুদ্ধেও মোটামুটি ভারসাম্য বজায় রাখে।

 

আরও পড়ুন: রয়টার্সের প্রতিবেদন / চীনের তৈরি জে-১০ দিয়ে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে পাকিস্তান

 

এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের হাতে থাকা চীনের তৈরি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান জে-১০ ও রাফায়েলের মতোই ৪.৫তম প্রজন্মের।

 

চীন-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাফায়েল ভারতকে আরেকটি বড় সুবিধা দেয়, তা হলো এর Meteor BVR (Beyond Visual Range) মিসাইল; যা প্রায় ১৫০-২০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে।

 

চীন অনেক আগেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিজেদের বহরে যুক্ত করেছে। তাই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান হাতে আসার আগ পর্যন্ত ভারতের জন্য সেরা বিকল্প রাফায়েলই।


এত ক্ষমতাধর রাফায়েলকে কীভাবে পরাস্ত করল পাকিস্তান?


রাফায়েল আফগানিস্তান, লিবিয়া, মালি, সিরিয়া, ও ইরাকে অপারেশনে অংশ নিয়েছে।

 

সবগুলো মিশনে এটি নিরাপদেই ফিরেছে, কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে গুলিতে ভূপাতিত হয়নি। তবে ৬ মে ভোর রাতে মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতে হয়েছে সামরিক দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ ক্ষমতাধর দেশ ভারতের অহংকারের প্রতীক হয়ে ওঠা রাফায়েলকে।


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, পাকিস্তান মূলত চীনের আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর যুদ্ধবিমান ও এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থার মাধ্যমে এই কাজ করেছে।


মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের তৈরি জে-১০ সি ব্যবহার করেই পাকিস্তান অন্তত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

 

জে-১০ সি হলো পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সবচেয়ে আধুনিক বহুমুখী যুদ্ধবিমান; যা তারা চীন থেকে এনেছে।

 

আরও পড়ুন: পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে পাকিস্তানে দেড়শ ফ্লাইট বাতিল

 

এই বিমান এইসিএ রাডার, অত্যাধুনিক বিভিআর (BVR-Beyond Visual Range) মিসাইল এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেমে সজ্জিত।


এর PL-15 BVR মিসাইল রয়েছে। PL-15 হলো চীনের তৈরি এক ধরনের দূরপাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যা জে-১০ সি বিমান থেকে ছোড়া যায়। এর পাল্লা ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এটি রাডার গাইডেড, ফলে লক্ষ্যবস্তু দূরে থাকলেও আঘাত হানতে পারে।

 

৬ মে গভীর রাতে অপারেশন সিন্দুর চালানোর সময় ভারতীয় বিমানগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমার কাছাকাছি নিচু উচ্চতায় উড়ছিল, যাতে তারা রাডারে ধরা না পড়ে। কিন্তু জে-১০ সি এর AESA রাডারে বিমানগুলো ধরা পড়ে এবং PL-15 মিসাইলের মাধ্যমে পাকিস্তান সেগুলোকে টার্গেট করতে সক্ষম হয়।

 

পাকিস্তানের কাছে চীনা ZDK-03 ও Swedish Saab 2000 AEW&C (Airborne Early Warning and Control) রয়েছে; যেগুলোর সাহায্যে তারা ভারতীয় বিমানগুলোর গতিপথ আগেই বুঝতে পারছিল।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন