ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে কারো পা কাটছে আবার কেউবা পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে একা স্কুলে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা, পার হচ্ছেন অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে। রোগীরা হেঁটে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে পার হচ্ছে ব্রিজ।
সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়ন ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী কুমার নদের ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ব্রিজটি। রেলওয়ের নির্মিত ব্রিজটি দিয়ে আগে ট্রেন চলাচল করতো। পরবর্তীতে পাশেই নতুন রেলপথ ও ব্রিজ নির্মিত হলে রেল চলাচল করে নতুন ব্রিজ দিয়ে। আর পুরানো ব্রিজ দিয়ে চলাচল শুরু করে স্থানীয়রা।
দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি সংস্কার না করায় ব্রিজের স্টিলের পাত খয়ে গিয়ে ছিদ্র হয়ে গেছে, আবার কোথাও পাত উঠে গেছে। ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। শুধু চলাচলই নয় মালামাল বহনেও হচ্ছে ভোগান্তি। অন্য পথ দিয়ে আসতে হলে তাদের দুই কিলোমিটার ঘুরে বাড়িতে আসতে হয়। তাদের দাবি, ব্রিজটি সংস্কার করে দেওয়া হোক অথবা এখানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হোক।
আরও পড়ুন: সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৯ কোটি টাকার চারটি সেতু
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, ‘মাচ্চর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই ব্রিজ পার হয়ে জেলা সদরে যায়। ব্রিজটির বিভিন্ন অংশের পাত ছিদ্র হয়ে গেছে, কোথাও পাত উঠে গেছে। চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টির সময় আরও ভোগান্তি বাড়ে। চলাচল করাই যায় না। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই।’
আরেক বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজ দিয়ে পারাপার হওয়ায় সময় অনেকেই পড়ে গিয়ে আঘাত পায়। অনেকের পা কেটে যায়। এর আগে এক ব্যক্তি পানিতে পড়ে যায়। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করলে সহজেই বাড়ি পৌঁছানো যায়। কিন্তু অন্য সড়ক দিয়ে যেতে গেলে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাতে করে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হয়।’
স্কুল শিক্ষার্থী আফসানা জানান, ‘এ ব্রিজের ওপর দিয়ে একা চলাচল করতে ভয় করে। এ কারণে মা অথবা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিজ পার হয়ে স্কুলে যাই। বৃষ্টির দিনে পিচ্ছিল হওয়ায় আরও বেশি ভয় করে। অনেকেই পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে, আবার অনেকের পা কেটে গেছে।’
আরও পড়ুন: টাঙ্গন নদীতে সেতুটি হলেই রক্ষা পাবে ১০ গ্রামের মানুষ
স্থানীয় বাসিন্দা বারেক মোল্যা বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে রেলওয়ে এই ব্রিজটি নির্মাণ করে রেল চলাচলের জন্য। এক সময় রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো স্থানীয় এলাকাবাসী এ ব্রিজ ওপর দিয়ে চলাচল শুরু করে। পরে ব্রিজের পাত নষ্ট হয়ে গেলে এলাকাবাসী সকলে মিলে অর্থ দিয়ে মালামাল কিনে ঠিক করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে রেল চলাচল শুরু হলে নতুনভাবে রেলপথ ও ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে নতুন পথ দিয়েই রেল চলাচল করে। পুরানো ব্রিজ দিয়ে আমরা চলাচল করি। কিন্তু বর্তমানে ব্রিজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’
ব্রিজটি সংস্কারে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও’র কাছে আবেদন করেছে স্থানীয়রা। এবিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘ব্রিজটি রেলওয়ের জায়গায় নির্মিত এবং সম্পূর্ণ মেরামত করতে বিপুল অংকের অর্থ লাগবে। আবেদনটি আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি। তবে আপাতত চলাচলের জন্য কিছুটা সংস্কার করা যায় কিনা সেটি দেখা হচ্ছে।’
ব্রিজটি পার হয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা সদরে আসেন। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করবে স্থানীয় প্রশাসন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।