ইতোমধ্যে প্রতিমার গায়ে রং-তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পূজা মণ্ডপ এলাকায় থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রকৃতির আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, দিগন্ত জুড়ে কাশফুল। জানান দিচ্ছে শরতে শারদীয় দেবীর আগমনীর বার্তার মাহেন্দ্র ক্ষণের। আনন্দে মাতোয়ারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তকুল। দুর্গাদেবীর আগমনী বার্তায় কুমার পাড়ায় সাজ সাজ রব। প্রতিমা শিল্পীরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে পূজারিদের হাতে প্রতিমা তুলে দিতে হবে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুন।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা ঘিরে ব্যস্ততা, শেষ দিকে প্রতিমা সাজসজ্জার প্রস্তুতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার কুমারশিল্পী মন্টু পাল বলেন, ‘আমরা মূর্তি তৈরির কাজে এখন দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। রাতে দিনে কাজ করছে কারিগররা। মূর্তি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড় ও সাজসজ্জার কাজ। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মূর্তি ডেলিভারির কাজ শেষ করতে হবে।’
রাজন পাল নামে আরেক কারিগর বলেন, ‘আমাদের এখন পুরোদমে কাজ চলছে। যতদ্রুত পারি আমরা কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। দিনে রাতে কাজ করে আমরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছি।’
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চৌধুরী রিপন বলেন, এবার ৫৮১টি মণ্ডপে একযুগে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮০টি, বিজয়নগর ৫৫টি, সরাইল উপজেলা ৫৩টি, নাসিরনগর ১৩৮টি, আশুগঞ্জ ১৫টি, নবীনগর ১২৭,বাঞ্ছারামপুর ৪২টি, কসবা ৪৭টি ও আখাউড়ায় ২৪টি।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে: র্যাব মহাপরিচালক
তিনি বলেন, ‘আমরা সব পূজা মণ্ডপের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে সভা করেছি। এবারের পূজা শান্তিপূর্ণভাবে করার লক্ষ্যে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।’
শিববাড়ী মন্দিরের পুরোহিত নন্দন চক্রবর্তী জানান, এ বছর দেবী গজে আগমন করবেন এবং দোলায় গমন করবেন। এর মধ্যে দিয়ে ভক্তদের আশীর্বাদ করে যাবেন দশভূজা দেবী মা দুর্গা। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করবো জীব, জগত জাতির যেন মঙ্গল হয়।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘আমরা হিন্দু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই, আগামী দুর্গাপূজা আপনারা নির্বিঘ্নে করবেন। আমরা আপনাদের পাশে থাকব। বিগত দিনে যেভাবে ছিল, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ইতিমধ্যে আমাদের ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করব। আমাদের টাস্কফোর্সের মাধ্যমে আপনাদের পাশাপাশি আমাদের দলের লোক বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে পাহারা দেবে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতকে ৫০০ কেজি চিনিগুড়া চাল উপহার
জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম বলেন, গতবছর জেলায় খুব সুন্দর পূজা হয়েছে। এবছর ৫৮১টি মণ্ডপে পূজা হবে। আমরা জেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপের নেতাদের সঙ্গে সভা করেছি। এবারের পূজা যেন সুন্দরভাবে হয়, সেজন্য পূজার সাথে জড়িত সব বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার জন্য এবং পূজার কার্যক্রমের জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠিপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হবে। আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
]]>