লাগামহীন দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। এরমধ্যেই শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে গত ৯ জানুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এতে আরও অস্থির হচ্ছে বাজার পরিস্থিতি। ভোক্তারা বলেন, এমনিতেই বাজারে চড়া নিত্যপণ্যের দাম। এরপরও ভ্যাট বাড়ায় বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সেইসঙ্গে চাপ বাড়ছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ভ্যাট বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
ভ্যাটের চাপে কি শুধু ভোক্তারাই নাকাল? খুচরা দোকানিরা বলছেন, বাজারে এমনিতেই দাম বেশি জিনিসপত্রের। ভ্যাট বাড়ায় তা আরও বেড়েছে। তাদের হিসাবও পাল্টে দিয়েছে সম্প্রতি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন- ২০১২ সংশোধন করে জারি করা এই অধ্যাদেশ। এতে কমে গেছে বেচা-বিক্রি।
আরও পড়ুন: শুল্ক-কর বাড়ল যেসব পণ্যে
প্রতিযোগিতার বাজারে স্বল্প মুনাফায় চলতে না পেরে ব্যবসার পরিধি ছোট করেছেন অনেক মুদি দোকানি। সালাম নামে এক মুদি দোকানি বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দামের প্রভাবে কমে গেছে বেচাকেনা। এতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। তাই ব্যবসা ছোট করেছি।
সালামের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা আরও কঠিন করে দিয়েছে টার্নওভার করের হিসাব। কারণ ভ্যাটের আওতা বাড়াতে টার্নওভার করের জন্য তালিকাভুক্তি সীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে কোন প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক বিক্রি ৫০ লাখ টাকা না হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে কোনো কর দিতে হতো না। অথচ বর্তমানে ৩০ লাখ টাকা হলেই দিতে হবে ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ওপর চাপানো ভ্যাটের বোঝা দিন শেষে বহন করতে হবে ভোক্তাকেই। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ভ্যাটের বোঝা ব্যবসায়ীদের ওপর চাপানো হলেও এর প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপরই। কারণ পণ্যের দাম বাড়লে বাড়তি অর্থ গুণতে হবে ভোক্তাকে।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা, ‘উসকে যাবে’ মূল্যস্ফীতি
এনবিআরের সাবেক সদস্যের মতে, চাপে থাকা অর্থনীতির বাস্তবতা আমলে নিয়ে যখন টার্নওভার করের সীমা বাড়ানো দরকার ঠিক তখনই উল্টো পথে হাঁটল সরকার। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, ডলারের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় টার্নওভার করের সীমা বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করা প্রয়োজন ছিল। তবে সেটি না করে সরকার ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে।
এদিকে রাইড শেয়ারিং, স্পন্সরশিপ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ ৮৫ ধরনের সেবা ও জ্যাম, জেলি, টিস্যু, সস, বিস্কুট, নুডলস, ওষুধসহ ৭৭ ধরনের পণ্যের ব্যবসায় টার্নওভার যাই হোক না কেন, ভ্যাট দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে; ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দেয়া সেই সাধারণ আদেশ বহাল রাখা রয়েছে এখনও।
]]>