কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, পূর্বধলা উপজেলায় ২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর, দুর্গাপুর উপজেলায় ৬০০ হেক্টর, কলমাকান্দা উপজেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ৫৩২ হেক্টর, বারহাট্টা উপজেলায় ৬৭৫ হেক্টর, কেন্দুয়া উপজেলায় ১ হাজার ৪৭৮, আটপাড়া উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর, মদন উপজেলায় ২ হাজার ১০ হেক্টর এবং খালিয়াজুরী উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এবার ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এবার আবাদ হয়েছে। যদিও কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫১ হেক্টর। তিনদফা বন্যার ফলে শেষের বন্যায় ধানের ফলন দেরিতে হওয়ায় সরিষার জন্য উপযুক্ত হয়নি জমি। যে কারণে একশত হেক্টর কম আবাদ হয়েছে বলে জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।
আরও পড়ুন: চোখ জুড়ানো সরিষায় বুক বাঁধছে চাষিরা, হলুদের সমারোহে আমেজে বাকিরা
তিনি আরও জানান, গত বছর ২০২৩ সালে আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৮৮০ হেক্টর। যার উৎপাদন হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭২ মেট্রিক টন। আগেরবার ২০২২ সালে ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর যার উৎপাদন হয়েছিল ৯ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। ২০২১ সালে ৫ হাজার ২৫০ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৬ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন এবং তারও আগে ২০২০ সালে ৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন ছিল ৬ হাজার ৬১৩ মেট্রিক টন। দিনে দিনে আবাদ এবং উৎপাদন বাড়ায় কৃষকরা দুটি ধানের ফসলের মাঝখানের সময়ে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। পতিত জমির পরিমাণও কমে আসছে। ধানের পাশাপাশি প্রায় লাখো কৃষক এই সরিষা আবাদে মনোযোগী হয়েছেন বলেও জানায় কৃষি অধিদফতর।
এদিকে সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের আমন আবাদের পর কিছুদিন জমিটা পতিত পড়ে থাকে। এই সময়টাকে কাজে লাগানোটাই ভেবেছি প্রথম। তার ওপর নিজেদের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটছে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে।
একই গ্রামের উদ্ভিদবিজ্ঞানের কলেজ শিক্ষক নাজমুল কবীর সরকার বলেন, আমরা চাকরি করলেও মূলত কৃষক। আমার বাবাও কৃষি করেছেন আমিও কৃষি করি। তিনি বলেন, সরিষা এমন এক ফসল যা শুধু ফেলে রাখলেই গাছ হয়। একদম কম খরচে ভালো ফলন যাকে বলে। যেটির জন্য আলাদা কোন কিছু করা লাগে না। আমরা বিভিন্ন সভা সেমিনারে বলার চেষ্টা করছি এটি খুব সহজের একটি শস্য।
আরও পড়ুন: বাড়তি লাভের আশায় সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন বরেন্দ্র জনপদের চাষিরা
গেল কয়েক বছরে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কৃষি অধিদফতরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তিন বছর মেয়াদি সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিলাম।
বিদেশি তেলের ওপর আমদানি ৪০ ভাগ নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে কৃষি প্রণোদনা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নেয়া হয়। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা আগ্রহী হয়। বিশেষ করে রোপা আমন আবাদের পর ইরি বোরো আবাদের ঠিক মাঝখানের সময়টাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে এবং ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে লাখো কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
তিনি বলেন, সরিষা মূলত কৃষকদের জন্য একটি বোনাস ফসল। এটি এই জেলার ১০ উপজেলাতেই করা সম্ভব। তবে এবার একশত হেক্টর জমি আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আবাদ হয়েছে বন্যার জন্য। বিশেষ করে অক্টোবরের বন্যার কারণে নভেম্বরে ফসলের মাঠ উপযুক্ত হয়নি। কারণ আমনের আবাদে পিছিয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। ধানের পাশাপাশি কৃষক সরিষার সমান গুরুত্ব দিলে এই জেলা যেমন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে তেমনি অর্থের দিক দিয়ে উন্নত হবে।