হিজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা বলেন, রবিবার বৈরুতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি বিরল ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান মুখপাত্র নিহত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহর সিনিয়র কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হত্যার সর্বসাম্প্রতিক ঘটনাটি ঘটে যখন লেবাননের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বিবেচনা করছে।
ইসরায়েল বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীর বেশ কয়েকটি ভবনেও বোমাবর্ষণ করেছে। এখানে দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাহর সদর দফতর ছিল। মানুষকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার সতর্কবার্তা দেওয়ার পর হামলাটি করা হয়।
হিজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিজবুল্লাহর গণমাধ্যম বিষয়ক প্রধান মোহাম্মদ আফিফ বেইরুতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আরব সমাজতান্ত্রিক বাথ পার্টির কার্যালয়ে হামলায় নিহত হন।
সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু এবং ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর নিহত হওয়ার পর থেকে আফিফ বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন।
গত মাসে, ইসরায়েলি হামলার আগে আফিফ তড়িঘড়ি করে বৈরুতে একটি সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন।
লেবাননের সেনা বাহিনী বলছে রবিবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর আল-মারিতে এক সামরিক কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় দুজন সৈন্য নিহত এবং দুজন আহত হয়েছে।
লেবাননের সেনা বাহিনী এই যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে বিরত আছে। ইসরায়েলের তরফ থেকে আল-মারি হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য আসেনি।
বৈরুত কেন্দ্রে মানুষের আর্তনাদ
বৈরুতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি ব্যস্ত মোড়ের কাছে হামলার আগে ইসরায়েলি বাহিনী সেখান থেকে সরে যাওয়ার কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি।
ঘটনাস্থলে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একজন ফটোগ্রাফার চারটি মৃতদেহ এবং চারজন আহত ব্যক্তিকে দেখেন। কিন্তু, হতাহতের পরিসংখ্যান নিয়ে কোনও সরকারী ঘোষনা দেয়া হয়নি। মানুষদের সেখান থেকে পালাতে দেখা যায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম এবং হামলার শব্দ শুনে এবং লোকজনের চিৎকার, গাড়ি ও গুলির শব্দে জেগে উঠি," সুহেল হালাবি নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন। " সত্যি বলতে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। এই প্রথমবার আমি এ্মন হামলা এত কাছ থেকে অনুভব করেছি।”
বৈরুতের কেন্দ্রে সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলা করা হয় ১০ অক্টোবর। এ হামলাতে দুটি স্থানে ২২ জন নিহত হয়।
হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যুদ্ধের সূচনা করার পরদিন থেকেই হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ শুরু করে।
ইসরায়েল লেবাননে প্রতিশোধমূলক বিমান হামলা শুরু করে এবং সংঘর্ষটি ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং সেপ্টেম্বরে তা যুদ্ধে রূপ নেয়। ইসরায়েলি বাহিনী ১ অক্টোবর লেবাননে আগ্রাসন চালায়।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩,৪০০ নিহত হয়েছে এবং ১২ লক্ষর বেশি মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ক’জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা তা জানা যায়নি।
হিজবুল্লাহ প্রতি দিন ইসরায়েলের ভেতরে রকেট নিক্ষেপ করছে, যার পাল্লা বৃদ্ধি পেয়ে এখন মধ্য ইসরায়েল পর্যন্ত আঘাত হানছে।
হিজবুল্লহার রকেট আক্রমণে অন্তত ৭৬জন নিহত হয়েছে যাদের ৩১ জন সৈন্য। এর ফলে ৬০,০০০ ইসরায়েলি তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।