রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ট্রফি প্যারেডে সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় আর বিশৃঙ্খলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বেঙ্গালুরুতে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের কাছে আরসিবির প্রথম আইপিএল শিরোপা উদযাপন করতে গিয়ে পদদলনের ঘটনা ঘটেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৩জন। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী নিহত ও আহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে শহরে।
আরও পড়ুন: প্রথমবার আইপিএল জেতায় কোহলিকে অভিনন্দন জানালেন হ্যারি কেইন
গতকাল (মঙ্গলবার) ফাইনালে পাঞ্জাবকে ৬ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় আরসিবি। এরপর আজ সারাদিন ধরেই কর্ণাটকে তাদের জয়ের উৎসব চলছে। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হিসেবে ট্রফি নিয়ে আজ বেঙ্গালুরুর রাস্তায় বাস প্যারেড করার কথা ছিল। কিন্তু শহরের ভয়াবহ যানজটের কথা মাথায় রেখে কর্ণাটক ট্রাফিক পুলিশ তাতে অনুমতি দেয়নি।
বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA) আয়োজিত দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের আশেপাশে মানুষের ভিড়ে আর তিল ধারণের ঠাই ছিল না।
এই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ আহত ও অচেতন মানুষদের কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই, যারা উদ্যাপন দেখতে এসেছিলেন, হুড়োহুড়ির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
কর্ণাটকের ডেপুটি চিফ মিনিস্টার ডিকে শিভাকুমার সমর্থকদের এই ভিড়কে 'অনিয়ন্ত্রণযোগ্য' বলে অবিহিত করেন। তিনি এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, 'অত্যাধিক ভিড়ের জন্য আমি দুঃখিত। আমরা ৫ হাজার সশস্ত্র সেনার ব্যবস্থা রেখেছিলাম। এটা তরুণদের স্বতস্ফূর্ত জমায়েত, আমরা তাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে পারি না।'
স্টেডিয়ামের কাছে বেঙ্গালুরুর মেট্রো স্টেশনের কিছু দৃশ্যেও দেখা গেছে, ট্রেন থেকে নামা বিপুল সংখ্যক মানুষ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছেন।
কাছের বাউরিং হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স একের পর এক আহত মানুষদের নিয়ে এসে নামিয়ে দিয়ে আবার স্টেডিয়ামের দিকে ফিরে যাচ্ছিল।
অনেকে গাছে উঠে, ডালে বসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখার চেষ্টা করছিলেন। কর্ণাটক সরকার নিরাপত্তার কারণে বিধান সৌধ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিজয় মিছিল বাতিল করেছিল।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেন, এই ট্রাজেডির বেদনায় জয়ের আনন্দ ঢাকা পড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, 'এর দায় এড়ানোর চেষ্টা আমি করব না। আমাদের সরকার এটা নিয়ে রাজনীতি করতে পারে না। আমি বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং ১৫দিনের মধ্যে তার ফল জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। জনতা এমনকি স্টেডিয়ামের ফটক পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে। এখানে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল। এতো বিশাল মানুষের সমাগম কেউ আশা করেনি। এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৫ হাজার, কিন্তু ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ এসেছে'
আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন হয়ে কত টাকা পেল বেঙ্গালুরু?
ভারতীয় কংগ্রেসের প্রধান মল্লিকার্জুন খড়গে ও ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার রাত থেকেই উদ্যাপনরত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজ করছে। পুরো রাত জুড়ে তারা ভিড় সামলানো এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে বলে সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে।