নোটিশ দেওয়ার পরও তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায়, খনন কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা নদী বিষখালী দীর্ঘদিন খননের অভাবে ভরাট হয়ে যায়। পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে সেচের সংকট দেখা দেয়, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার মানুষ। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে নদীটি পুনঃখননে জরিপ কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২৩ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদী খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আরও পড়ুন: নেই কোন সেতু, ঝুঁকি নিয়ে শীতলক্ষ্যা পারাপার
নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ জায়গা খনন করা হলেও, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রপুর ও সাগরকাঠি এলাকায় কয়েকটি স্থাপনার কারণে খনন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মাত্র এক কিলোমিটার খাল খননে আরও ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও নদীর জমিতে দখল করে করা স্থানীয় আবুল বাশার নামের এক ব্যক্তির নিজস্ব বাড়ি, কবর স্থান ও মসজিদের কারণে খনন কাজ শেষ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এলাকাবাসীর দাবি সব বাধা উপেক্ষা করে সঠিকভাবে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খাল খননের দাবি জানান।
স্থানীয় আব্দুল জব্বার নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘এই নদী দিয়ে বড় বড় ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতে দেখেছি। কিন্তু নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের এলাকার মানুষ চাষাবাদে পানি পাচ্ছে না। এমনকি গৃহস্থলী কাজের জন্য পানি পাওয়া যায়নি। যার ফলে অনেকের ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থায় পড়েছে। নদী খননের মধ্যে দিয়ে যেমন নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে। তেমনি এলাকার মানুষের পানির সংকটে অনাবাদি জমি পড়ে থাকবে না। আমরা দ্রুত নদী খননের দাবি জানচ্ছি।’
বিষখালী নদীপাড়ের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগে দুই কাঠা জমি ক্রয় করে বসতবাড়ি তৈরি করে বসাবস করছিলাম। আগে জানতাম না সরকারের জমি এভাবে খাল কাটার কাজে নিয়ে যাবে। এখন আবারও নিঃস্ব হলাম।’
এদিকে আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা জমি ক্রয় করে সরকারকে খাজনা দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খনন করতে চাচ্ছে। ক্রয়কৃত জমিতে খাল খনন করা হলে ক্ষতিপূরণ অথবা পুনর্বাসনের না করা হলে জমিতে খাল কাটতে দেওয়া হবে না।’
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘সিএস রেকর্ড ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে খাল খনন কাজ শুরু করা হয়। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ ও মাইকিং করার পরেও, রামচন্দ্রপুর ও সাগরকাঠি এলাকায় কয়েকটি স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় খনন কাজে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: অবৈধ বালুমহালের ড্রেজার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে গুলি!
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সবশেষ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়া হলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ সম্পন্ন করে খাল খনন করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।বাগেরহাটের বিষখালী নদীর প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদী পুনর্খননে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ইতো মধ্যে যেখানে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন,মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। সেচের অভাবে সেখানে বোরো চাষ হয় মাত্র ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। বিষখালি নদী খনন শেষে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হলে রবি মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া নদীর স্লুইজ গেটগুলো মেরামত করা হলে এক ফসলি জমিগুলোতে ফসল বাড়বে।