বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে প্রথমে ব্যাটিং করে রেকর্ড রান সংগ্রহের পর প্রথমবার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল চিটাগাং কিংস। কিন্তু ফরচুন বরিশালের তামিম ইকবাল ও কাইল মেয়ার্সের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তাদের সে স্বপ্ন গ্লানিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে ১৯৫ রানের লক্ষ্য দেয় কিংস। এটি ছিল বিপিএলের ফাইনালে প্রথম ইনিংসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ। ফলে শিরোপা ধরে রাখতে রেকর্ড করতে হতো বরিশালকে।
আর লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ব্যাটারের ব্যাটিং ঝড় এবং শেষের নাটকীয়তার পর ৩ বল বাকি থাকতেই শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশাল।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ২৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন অধিনায়ক তামিম। এরপর কাইল মেয়ার্সের ২৮ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংসটি সে কাজ আরও সহজ করে দেয়। যদিও শেষদিকে মেয়ার্স ও মাহমুদুল্লাহকে ফিরিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল চিটাগাং, তবে রিশাদ হোসেনের ৬ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংসে সেই আশার গুড়েও বালি পড়ে।
চিটাগাংয়ের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন শরিফুল ইসলাম। ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, নাঈম ইসলাম ২টি ও বিনুরা ফের্নান্দো নিয়েছেন ১টি উইকেট।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন তামিম। আর তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে চলেন তৌহিদ হৃদয়। প্রথম ওভারে বিনুরাকে তামিম ৩টি চার মারলে ওই ওভারে ১৪ রান সংগ্রহ করে বরিশাল। এরপর আরাফাত সানিকে দেখেশুনে খেলে তৃতীয় ওভারে আবার বিনুরার বলে ৩টি চার মেরে ১২ রান সংগ্রহ করেন তামিম।
চতুর্থ ওভারে খালেদ আহমেদ দেন ১১ রান। পরের ২ ওভারে তামিম উইকেট ধরে রাখায় মনোযোগী হলে রানের চাকা কিছুটা গতি হারায়। ফলে পাওয়ার প্লেতে চিটাগাংয়ের মতোই বিনা উইকেটে ৫৭ রান সংগ্রহ করে বরিশাল।
সপ্তম ওভারে ১টি করে ডবল, চার ও ছক্কায় ১৩ রান সংগ্রহ করে বরিশাল। সেই সঙ্গে ২৪ বলে ১টি ছক্কা ও ৯টি চারের মাধ্যমে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম।
অষ্টম ওভারটি দেখেশুনে খেলার পর নবম ওভারে বরিশাল শিবিরে জোড়া আঘাত হানে চিটাগাং। শরিফুল ইসলামের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে ফিরতে হয় তামিমকে, আর চতুর্থ বলে শরিফুলের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নতুন ব্যাটার ডাওইড মালান। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলেও শরিফুল রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত পাল্টান তিনি। ফলে দলীয় ৭৬ ও ৭৮ রানে প্রথম ও দ্বিতীয় উইকেট হারায় বরিশাল।
তামিম ফিরে গেলে খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তৌহিদ, তাতে কিছুটা সফলও হন তিনি; দশম ওভারে তৌহিদের ২টি চারসহ ১৫ রান তোলে বরিশাল। তবে পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ওপেনার। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ২৮ বলে ৩টি চারে ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩২ রান করে যান তিনি। এতে দলীয় সংগ্রহ ১০০ পূর্ণ করার আগেই বরিশালের ৩ ব্যাটার বিদায় নেন।
চতুর্থ উইকেটে কাইল মেয়ার্স ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে বড় জুটি গড়ার আভাস মেলে। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিক। দ্বাদশ ওভারে মেয়ার্স ২টি ছক্কা হাঁকালেও পরের ওভারের প্রথম তিন বলে ৩টি চার আসে, এর ২টি মুশফিকের ব্যাট থেকে ও পরেরটি অতিরিক্ত হিসেবে। চতুর্থ বলে আবার উড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে ডিপ লেগে নাফের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৯ বলে ৩টি চারে ১৬ রান করে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ফিরে গেলে ভাঙে ১৪ বলে ৩৪ রানের জুটি। পরে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন মেয়ার্স। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫তম ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মেরে শেষ ৫ ওভারে জয়ের লক্ষ্য ৪৪ রানে নামিয়ে আনেন এই ক্যারিবীয়।
শেষের দিকে খালেদের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন মেয়ার্স, তবে তা লুফে নিতে পারেননি শরিফুল। এরপর শেষ ৩ ওভারে ২৫ রান নিতে হতো বরিশালকে। তবে অষ্টাদশ ওভারে আবারও ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন শরিফুল।
ওভারের তৃতীয় বলে শরিফুলের বলে মেয়ার্স আবার ক্যাচ দিলে সেই ক্যাচ ধরতে ভুল হয়নি বদলি ফিল্ডার মার্শাল আইয়ুবের। ৩টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন মেয়ার্স। এরপর পঞ্চম বলে মাহমুদুল্লাহকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিয়ে ফেরেন মুশফিক। ফলে ৬ উইকেট হারানো বরিশাল শেষ ২ ওভারে পায় ২০ রানের লক্ষ্য।
১৯তম ওভারের প্রথম ৫ বলে রিশাদ একটি ছক্কাসহ মোট ১২ রান নিলে ম্যাচের পাল্লা বরিশালের দিকে ভারী হয়ে ওঠে। তবে পরের বলেই ফের নাটক। বিনুরার ওভারের শেষ বলে জোরে ব্যাট চালিয়ে শর্ট মিড-অনে ধরা পড়েন মোহাম্মদ নবি। ফলে শেষ ওভারে ৮ রান করতে হতো বরিশালকে।
এরপর শেষ ওভারের প্রথম বলেই লং অনে বিশাল ছক্কা হাঁকান রিশাদ। পরে ২ ব্যাটার একবার জায়গা পরিবর্তনের পর তৃতীয় বলে রান আউট হয়ে যান রিশাদ, কিন্তু আম্পায়ার দুহাত প্রসারিত করে ওয়াইড দিলে জয়োল্লাসে মেতে ওঠে বরিশালের সমর্থকেরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চিটাগাং কিংস: ১৯৪/৩ (ইমন ৭৮*, নাফে ৬৬, ক্লার্ক ৪৪; মোহাম্মদ আলি ১/২১, ইবাদত ১/৩৫)।
ফরচুন বরিশাল: ১৯৫/৭ (তামিম ৫৪, মেয়ার্স ৪৬, তৌহিদ ৩২; শরিফুল ৪/৩৪, নাঈম ২/১৮)।
ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল।