রোববার (১৯ জানুয়ারি) দিনভর সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক। তবে গ্রামবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। কৃষিকাজের প্রয়োজন ছাড়া সীমান্তে কাছাকাছি কাউকে যেতে দিচ্ছে না বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। নো-ম্যান্সল্যান্ডের আশপাশে চাষযোগ্য জমি থাকলেই কেবল সেখানে যাওয়ার অনুমতি মিলছে।
নোম্যান্সল্যান্ডে পড়ে আছে আম ও বরই গাছের কাটা অংশ। গ্রামের সড়কেই দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি সদস্যরা। কেউ সীমান্তে যেতে চাইলে পরিচয় জানতে চাইছেন তারা। কৃষক না হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় স্বাভাবিক টহল দিচ্ছে বিজিবি সদস্যরা। ওপারে কয়েকজন বিএসএফ সদস্যকেও টহল দিতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, এটি বিএসএফের নিয়মিত টহলের অংশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশে ঢুকে কমপক্ষে ৩০টি গাছ কেটে ফেলেছে ভারতীয়রা। এর মধ্যে আম গাছই বেশি। কালিগঞ্জ গ্রামের হযরত মোন্নার ছেলে আলতাব হোসেনের ৭টি গাছ কেটে ফেলে ভারতীয় নাগরিকরা।
আরও পড়ুন: সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি-বিএসএফ
আলতাব হোসেন বলেন, ভারতীয়রা বড় বড় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এবং এলোপাতাড়িভাবে গাছ কেটে ফেলে। এসময় বাংলাদেশিরা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে আরও গাছ কাটতো তারা। ৫ বছর বয়সী তার প্রতিটি গাছ থেকে গত বছর এক মণ করে আম পেয়েছিলেন। এ বছর আরও বেশি ফলন হতো।
সীমান্তের বাসিন্দা পলাশ আলী বলেন, ‘আমরা শুনেছি গাছ কেটে ফেলার জন্য বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এই দুঃখ প্রকাশে আমরা সন্তুষ্ট নই। বিগত দিনগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেছে অনেকবারই। একই রকম অন্যায় তারা কতবার করবে? ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এদিকে সীমান্ত এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে বলে মনে করেন বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সীমান্তের বিষয়গুলো এরই মধ্যে বিজিবির মহাপরিচালককে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করবে। বাংলাদেশের জনগণ ও বিজিবি প্রস্তুত আছে। এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
এনিয়ে রবিবার (১৯ জানুয়ারী) দুপুরে ৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যান্য দিনের ন্যায় টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত এলাকার জনসাধারণকে নিয়ে দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে, যাতে কেউ সীমান্তের জিরো লাইন অতিক্রম না করে। পাশাপাশি কৃষক ছাড়া যেন কেউ সীমান্ত এলাকায় না যায়, সেবিষয়ে সর্তক পাহারা দেয়া হচ্ছে।
শনিবারের ঘটনায় বিএসএফকে প্রতিবাদ জানিয়ে পত্র দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিজিবি অধিনায়ক আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হওয়া কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বাধা দেয়ার পর হওয়া উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের নাগরিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশি নাগরিকের ভারতে গিয়ে গম কাটা বা ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ করে গাছ কাটার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমন ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে যেন না হয়, সেবিষয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি।’
আরও পড়ুন: যুবকের প্রেমে মজে বাংলাদেশে ভারতীয় গৃহবধূ, সীমান্তে ধরল বিজিবি
এর আগে গতকাল শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ভারতীয় নাগরিকরা জিরো লাইন পার হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আমগাছ কাটলে বাধা দেয় বাংলাদেশি নাগরিকরা। এমনকি বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের নাগরিকরা। এসময় ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ সদস্যরা ১০টি ককটেল, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও পাথর নিক্ষেপ করে। পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তারা। এতে পাথর ও হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন, শিবগঞ্জেল উপজেলার কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার মেসবাহুল হক, বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি ও মো. ফারুক। পরে বিকেলে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।