তবে অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হলে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়ও বাড়বে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
সিগারেট
গত জানুয়ারিতে সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক দুটোই বাড়ানো হয়েছিল। আদেশে নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা প্রতি সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না। তবে তামাক শিল্পে ব্যবহৃত সিগারেট পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে বাজেটে। সেক্ষেত্রে আরেক দফায় দামে প্রভাব পড়তে পারে।
দেশীয় মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে হ্রাসকৃত ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। উৎপাদনের ক্যাটাগরিভেদে ২ থেকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এর ফলে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কসমেটিক পণ্য
নারীদের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বিভিন্ন হারে বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার আছে। সেটি বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে। একইভাবে অন্য সব কসমেটিক্সের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে নতুন চমক নেই: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অটোরিকশার ব্যাটারি
ঢাকাসহ সারা দেশে বিপজ্জনক বাহনের নাম ব্যাটারিচালিত রিকশা। অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ৭৫০ ওয়াটের ডিসি মোটরের আমদানি শুল্কও ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
সুতা
দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি কেজি কটন সুতা ও ম্যান মেইড ফাইবারে তৈরি সুতার সুনির্দিষ্ট কর তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হচ্ছে। এতে দেশীয় সুতায় তৈরি গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বাড়তে পারে।
রড
রড, এঙ্গেল বার তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া বিলেট-ইনগট সুনির্দিষ্ট কর এবং স্ক্র্যাপ গলানোর রাসায়নিকের ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকা ম্যাঙ্গানিজের শুল্ক-কর বাড়ানো হচ্ছে। বিধায় নির্মাণসামগ্রীর প্রধান উপকরণ রডের দাম বাড়তে পারে।
ফ্রিজ-এসি
অব্যাহতির সংস্কৃতি পরিহার করতে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনারের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে দেশীয় ফ্রিজ-এসির দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি বিদেশি ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানি বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: যে ওয়েবসাইটে মিলবে বাজেটের তথ্য
ব্লেড
সেলুনে শেভিং কাজে ব্যবহৃত ব্লেডের দাম বাড়তে পারে। কারণ স্টেইনলেস স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুত ব্লেড এবং কার্বন স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুতকৃত ব্লেডের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।
বাস-ট্রাক
বাস-ট্রাকের চেসিস বিদেশ থেকে আমদানির পর দেশে বডি প্রস্তুত করে রাস্তায় চলাচলের উপযোগী করা হয়। বাস-ট্রাকের বডি বানানোর ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এতে বাস-ট্রাকের দাম বাড়বে।
টেবিলওয়্যার
বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেটসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
হেলিকপ্টার
নতুন অর্থবছরে হেলিকপ্টার আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। তাতে হেলিকপ্টার আমদানির খরচ বাড়বে।
বিদেশি চকোলেট
চকোলেটের দামও বাড়তে পারে। চকলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চকলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য চার ডলার। এটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হচ্ছে। এতে আমদানি করা সব ধরনের চকোলেটের দাম বাড়তে পারে।
খেলনা
স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বাজেটে বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এতে বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে।
মার্বেল-গ্রানাইট
বাসা-বাড়ির মেঝেতে ব্যবহৃত মার্বেল-গ্রানাইড পাথর আমদানির সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শাতংশ করা হচ্ছে। এতে মার্বেল-গ্রানাইডের দাম বাড়তে পারে।
এছাড়াও দাম বাড়তে পারে- মাখন, তারকাঁটা, সব ধরনের স্ক্রু, নাট-বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, সেল্ফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড/কোটেড পেপার, প্লাস্টিকের তৈরি ওয়ান টাইম গ্লাস, বাটি, প্লেট ইত্যাদি; তামাক বীজ, মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ফুড সাপ্লিমেন্ট, বেভারেজ আইটেম, দরজার তালা ইত্যাদি।
]]>