বাবার পরিচয় পেতে মায়ের সঙ্গে আদালতপাড়ায় শিশু আফিয়া

৫ দিন আগে
সাড়ে তিন বছরের অবুঝ শিশু আফিয়া। পিতৃপরিচয় পাওয়ার আশায় মায়ের সঙ্গে আদালতপাড়ায় ঘুরছে পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখার পর থেকে। কিন্তু সে জানে না আদৌ পাবে কিনা তার বাবার পরিচয়। মা বিউটি আক্তারও স্বামীর নাম-ঠিকানা জানতে পারেনি আজও।

ছদ্মনাম বিউটি আক্তার। ২০১৯ সালে সৎ মা কাজল বেগম তাকে বিক্রি কর দেয় একটি যৌনপল্লীতে। সেখানে থাকার পর বিউটি হয়ে যায় গর্ভবতী। পরে যৌনপল্লির লোকজন মেয়েটিকে ফেলে দিয়ে যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে বিউটিকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ফরিদপুরের সেইফজোনে। সেখানে সিজারিয়ান করানো হলে কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে মেয়ে। নাম রাখা হয় আফিয়া। আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে বিউটির মেয়ে আফিয়া। কিন্তু আজও মেলেনি আফিয়ার পিতৃপরিচয়। এরইমধ্যে আফিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মা। নিজেও চান স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে, চান একটি একটি কর্মসংস্থানও।


অন্য শিশুর মতো আফিয়াকে মানুষ করতে ও তার মাকে প্রদিক্ষণ দিতে এরইমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন আদালত। আর অসহায় মানুষ দুটির দায়িত্ব কেউ নিতে চাইলে আবেদন করলে যাচাইবাছাই করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন মাদারীপুর শিশু আদালত।


এদিকে রোববার বিকেলে শিশু আদালতের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকেরের সিদ্ধান্তে পুলিশি নিরাপত্তায় আফিয়া ও তার মাকে পৌঁছে দেয়া হয় বরিশালের সেইফজোনে। সেখানে থেকে আপাতত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন বিউটি আক্তার।


আরও পড়ুন: মা-বাবার পরিচয় না থাকলেও নিবন্ধন পাবে পথশিশুরা


বিউটি আক্তার বলেন, ‘আমি ও আমার মেয়ের অন্যদের মতো বাঁচতে চাই। প্রয়োজনে কাজ করে খাবো। তবুও বন্দি জীবনে আর থাকতে চাই না। আমার সৎ মা আমাকে বিক্রি করে দেয়ায় আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। আদালতের মাধ্যমে এই অন্ধকার জীবনে আলো চাই। আমার মেয়েটির জন্য খুব চিন্তা। তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’


ফরিদপুর জেলা পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ‘ফরিদপুর সেইফজোন থেকে মা ও মেয়েকে মাদারীপুর আদালতে নিয়া আসা হয়। তাদের দেখতে সত্যিই মায়া লাগে। যদিও বিষয়টি খুবই কঠিন, তারপরও শিশুর পিতাকে খুঁজতে কাজ করছে বিভিন্ন মাধ্যমে।’


মাদারীপুর শিশু আদালতের পেশকার জালাল মোল্লা বলেন, ‘মা ও মেয়ের জন্য আলাদা কিছু করার চিন্তা করেছেন আদালত। বিচারকের নির্দেশে মেয়েটিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মা ও মেয়ের দায়দায়িত্ব কেউ নিতে চাইলে আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালত পরীক্ষানিরীক্ষা ও যাচাইবাছাই শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’


মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ঘটনায় ওই মেয়েটির মা ও বাবাকে আইনের আওতায় আনা উচিত।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন