বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস: কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ গদখালীর ফুল চাষিরা

১ মাস আগে
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে ফুলের পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ যশোরের গদখালীর চাষিরা। চাষিদের দাবি গত বছরের অর্ধেক মূল্যও পাচ্ছেন না তারা। উৎপাদন খরচ উঠলেও খুব বেশি লাভবান হতে পারবেন না তারা। ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ তিন কারণে বাজার নমনীয়। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না।

ঘন কুয়াশার মধ্যেও রাতের আধার কাটার আগেই দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার গদখালীতে বাহারী ফুল নিয়ে আসছেন চাষিরা। মূলত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বসন্ত দিবস আর পরের দিন শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দুই দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই ফুলের বাজার চড়া থাকে। তাই চাষিরা বিপুল পরিমাণে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনিগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুল নিয়ে এসেছেন বাজারে।

 

 

তবে কাঙ্ক্ষিত দাম মিলেছে না বলছেন চাষিরা। তাদের দাবি, গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি যে গোলাপ ২২ থেকে ২৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এ বছর ১০ টকায় বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।  গ্লাডিওলাস ও জারবেরার দাম বিগত দিনের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও লাভবান হওয়া যাবে না। অন্যান্য ফুলেরও একই দশা। ফলে অন্য বছরের মত আনন্দ নেই মনে।

 

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির তিন দিবসে কোটি টাকা আয়ের আশা রংপুরের ফুল চাষিদের

 

আব্দুস সালাম নামে এক ফুল চাষি বলেন, গত বছর গোলাপ ২২ টাকার উপরে বিক্রি করেছি। এবার ঢাকার ব্যাপারীরা ফুল কম কেনায় অর্ধেক দামে চলে এসেছে। গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। মূলত ঢাকায় চলমান পরিস্থিতির কারণে ফুলের বাজার মন্দা। খুব একটা লাভ হবে না। যাদের নিজেদের জমি তারা খরচ তুলতে পারলেও জমি লিজ নিয়ে চাষ করা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

জালাল উদ্দিন নামে অপর এক চাষি বলেন, আমার ১২ কাঠা জারবেরা ফুল চাষ রয়েছে। গত কয়েকদিন ফুলের দাম অনেক কম ছিল। গতকাল থেকে ফুলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আজ প্রতি পিস জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৭ টাকা দরে। আশা করছি লোকসান হবে না।

 

মঞ্জুর হোসেন নামে এক চাষি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর একটু দেরিতে এবং সবাই একসঙ্গে ফুল চাষ করেছে। ফলে এক সঙ্গে সকল ফুল বাজারে এসেছে। তাছাড়া গত কয়েকদিন গরম পড়ায় ফুল ফুটেছে বেশি। সবমিলিয়ে বাজারে ফুলের জোগান বেশি। এসব কারণে এ বছর ফুলের দাম কিছুটা কম। তবে আজকের বাজারটা অনেক ভালো।

 

 

তিনি আরও বলেন, দুই হাজার জারবেরা এনেছি, প্রতি পিস ১৪ টাকা দরে, চন্দ্রমল্লিকা ৩ টাকা ও গ্লাডিওলাস ৮ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে গতবছরের দাম পাইনি। তারপরও লাভ করতে পারবো বলে আশা করছি।

 

আজিজুর রহমান নামে আরেক চাষি বলেন, আমাদের একটা টার্গেট ছিল গত বছরের মত গোলাপ ২৫/৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু সেটা হয়নি। শবেবরাত সহ নানা কারণে ফুলের দাম। তারপরও কিছুটা লাভবান হতে পারব।

 

জামাল উদ্দিন নামে এক চাষি বলেন, এ সময়টায় আমাদের চাষিদের মনে আনন্দ থাকে। সেই আনন্দটা এ বছর নেই। হঠাৎ গরম পড়ার কারণে গ্লাডিওলাস দ্রুত ফুটেছে। যে কারণে জোগান বেশি হওয়ায় এ বছর ফুলের দাম নেই। সকলেই লোকসানে আছে। এছাড়া অন্যান্য ফুলের দাম পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলিয়ে উৎপাদন খরচ উঠিয়ে লাভ করা দুষ্কর হবে। তারপরও সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি আছে। সে সময় ভালো দাম পেলে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

 

তবে ফুলের দাম কম থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। ঝিনাইদহের বারোবাজার এলাকার ফুল ব্যবসায়ী নূর ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় ফুলের দাম বেশ কম। গোলাপ ১০টাকা পিস কিনেছি। গত বছর ২৫/৩০ টাকা দরে কিনেছিলাম। আশা করি এবার লাভবান হতে পারবো। তবে চাষিদের লাভ কিছুটা কম হবে।

 

আরও পড়ুন: চাঙ্গা গদখালী ফুলের বাজার, বাড়তে শুরু করেছে দাম

 

ফিরোজ আলী নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, ফুলের দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে। চাষিরা এ দামে সন্তোষ না। আমরা ফুল নিয়ে লাভ করতে পারবো বলে আশা করছি।

 

ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, এ বছর শীতের মধ্যে হঠাৎ গরম পড়ার কারণে ফুল ফুটেছে বেশি। তাছাড়া ভালোবাসা দিবসের দিন শবে বরাত। ধর্মীয় কারণে এ বছর চাহিদা কিছুটা কম। সর্বোপরি ঢাকার ব্যবসায়ীরা ফুলের অর্ডার কম দিয়েছে। যে কারণে বাজার নমনীয়। এ অবস্থায় আমরা এই সময়ে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলাম সেটা অর্জন সম্ভব হবে না।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরের প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৩ ধরনের ফুলের চাষ হয়। এবং এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোক জড়িত।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন