সরেজমিনে ঘুরে দ্বিতীয় পর্বে সময় সংবাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে জলাবদ্ধতা কমার কারণ।
জানা গেছে, ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত টানা চার দিনে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে— এক দিনে ১৯৪ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি। অথচ বিস্ময়করভাবে, এবার ডুবে যায়নি বন্দরনগরী।
গত বছরগুলোতে বর্ষার শুরুতেই অন্তত ৫ বার জলাবদ্ধতায় ভুগতে হয়েছে নগরবাসীকে। তবে এ বছর ছবিটা পুরোপুরি ভিন্ন। পানি জমছে ঠিকই, তবে সেটা নামছে দ্রুত। চিরচেনা ভোগান্তি নেই, যানজট নেই, ভেসে যাওয়া দোকানপাটের গল্প নেই।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, জলাবদ্ধতা কমার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ড্রেন ও খালের মধ্যে সংযোগ স্থাপন। খালগুলোর প্রশস্তকরণ, ময়লা ও মাটি অপসারণ এবং কর্ণফুলী নদীতে পানি প্রবাহের মুখ পরিষ্কার করাও ছিল বড় কারণ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ বলেন,
জলাবদ্ধতা কমার মূল কারণ— নালার সঙ্গে খালের সংযোগ নিশ্চিত করা। আগে যেখানে পানি জমে থাকতো, এখন দ্রুত নামছে।
এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে বন্দরের পক্ষ থেকে ৮টি পয়েন্টে ড্রেজিং করা হয়, যেটি পানি নামার গতি অনেক বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: জলাবদ্ধতা নিরসনে সিসিকের কন্ট্রোলরুম
শোলকবহর এলাকার চাশমা ও মির্জা খালের মোহনায় আগে শুধু মির্জাখাল দিয়ে পানি নামতো। এখন দুটো খালই ১৭ ফুট প্রশস্ত করায় সেখানে পানি আটকে থাকছে না।

একটি স্থানীয় বেকারির মালিক জানান, আগে দোকানের সামনে সবসময় পানি উঠত, এখন আর পানি ওঠে না। সিটি করপোরেশন দোকান ঘেঁষা নালা পরিষ্কার করেছে, দোকান ভেঙে দিয়েছে। এখন পানি চলাচল ঠিকঠাক।
চকবাজারের ফুলতলা এলাকায় চাক্তাই ও হিজলা খালের মোহনায় একসময় ময়লা, শোলা আর বাঁধ জমে পানি আটকে থাকতো। এখন সেই বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে, খাল পরিষ্কার—পানি সরাসরি পড়ছে কর্ণফুলীতে।
স্থানীয় রফিক আহমেদ বলেন, ‘গত ১০ বছরে এমন পরিষ্কার চকবাজার আমরা দেখিনি।’
সমন্বয়ের ফলেই এই সাফল্য হয়েছে বলে জনিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পাকা ধান, দিশেহারা কৃষক
তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা কমার কৃতিত্ব এককভাবে কোনো সংস্থার নয়। সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন,
জলাবদ্ধতা নিরসনে চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা এবং সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ছিলেন নেতৃত্বে। ৮টি কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হয়।
জিইসি মোড়, পার্কভিউ হাসপাতাল, খাজা রোড— কিছু এলাকায় পানি জমেছে ঠিকই, কিন্তু আগের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নেমে গেছে পানি।
চট্টগ্রামের বর্ষা মানেই ছিল আতঙ্ক— তবে এখনকার বর্ষা হয়তো স্বস্তির প্রতীক হয়ে উঠছে। নাগরিকরা ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছেন এক সহনশীল নগর পরিবেশ। একসময় যাকে নিয়ে হতাশা ছিল, এখন তাকে নিয়েই তৈরি হচ্ছে আশাবাদের গল্প।