ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ মে চেক জালিয়াতির একটি মামলায় আদালত চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাদবরকে দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর গত ১৯ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তবে এখনো স্থানীয় সরকার বিভাগ বা আদালত তাকে পুনর্বহাল করেনি বলে পরিষদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবুও চেয়ারম্যান জলিল মাদবর নিয়মিত অফিস করছেন এবং চেক-দলিলে স্বাক্ষর দিচ্ছেন।
পরিষদের সচিব লিপি আক্তার বলেন, ‘চেয়ারম্যান বরখাস্ত হওয়ার পরও অফিস করছেন। আগের ইউএনও মহোদয় নাকি তাকে মৌখিকভাবে অফিসে বসতে বলেছেন। চেয়ারম্যান আমাকে বলেন, ইউএনও কিছু বলছে না, তোমার সমস্যা কি? আমি তাকে বলেছি চেক ও কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করতে, কিন্তু তিনি বলেন, আমি অফিস প্রধান, স্বাক্ষর করবোই। এরমধ্যে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এক পার্সেন্ট, হাটবাজার ও উন্নয়ন সহায়তা তহবিল মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকার চেকে তিনি স্বাক্ষর করেছেন।’
আরও পড়ুন: শারীরিক সম্পর্ক না করলে নির্যাতন করতেন ডিসি আশরাফ, অভিযোগ ভুক্তভোগী গৃহবধূর
তিনি আরও জানান, ‘এক পার্সেন্ট ফান্ডে ১৩ লাখ, উন্নয়ন সহায়তা তহবিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেকসহ বিভিন্ন খাতে তার স্বাক্ষর আছে। চেয়ারম্যান পুনর্বহালের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন, কিন্তু তার কোনো লিখিত কাগজ আমাদের কাছে নেই।’
প্যানেল চেয়ারম্যান ওহেদুজ্জামান শিবলু বলেন, ‘চেয়ারম্যান বরখাস্ত হলেও পুনর্বহালের কোনো কাগজ দেখাননি। আমি তাকে বলেছি, পুনর্বহাল ছাড়া কীভাবে চেক ও কাগজে স্বাক্ষর করছেন? তিনি বলেছেন, ঠিক করছি। পরে ইউএনও অফিসে গিয়ে জানতে পারি, ইউএনও তাকে মৌখিকভাবে বসতে বলেননি এবং লিখিত অনুমতিও দেননি।’
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ভুলু বলেন, ‘এক বছর আগে চেয়ারম্যান বরখাস্ত হয়েছেন। পরে শুনি তিনি পরিষদে যোগদান করেছেন। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কীভাবে আবার পরিষদে বসার অনুমতি পেলেন। চেয়ারম্যান বলেছেন, হাইকোর্টের অনুমতি পেয়েছি। আমরা দেখেছি তিনি পরিষদে বসে অফিস পরিচালনা করছেন। স্বাক্ষরও করছেন। ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন খাতে সরকারের বরাদ্দ আসে, সেগুলো কীভাবে কী করছেন আমাদের জানা নেই। চেয়ারম্যান যদি কোনো জালিয়াতি করে থাকেন, তবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
আরও পড়ুন: শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল / রোগীর কাছে চিকিৎসকের টাকা দাবি, সত্যতা পেল দুদক
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, ‘ইটভাটার লেনদেন সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার হয়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলাম। এখনও স্থানীয় সরকার বিভাগ আমাকে পুনর্বহাল করেনি। তবে হাইকোর্ট থেকে অনুমতি পেয়েছি। এছাড়া শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন জাজিরা ইউএনওকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দিতে বলেছিলেন, তবে লিখিত কিছু পাইনি।’
তবে মৌখিক অনুমতির বিষয়টি অস্বীকার করে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ‘তিনি এখনো বরখাস্ত রয়েছেন। মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা মূলনা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করব। বরখাস্ত হওয়ার পরও যদি কোনো চেয়ারম্যান অফিস পরিচালনা ও আর্থিক লেনদেন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
]]>