বদলি হজ কী
বদলি হজের বিষয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বিদায় হজে খাসয়াম গোত্রের একজন নারী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার বাবার ওপর হজ ফরজ হয়েছে, কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ যে, বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব’? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ। (তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারবে)’। (বুখারি ১/২০৫, মুসলিম ১/৪৩১)
হজরত আলী (রা.) অতিশয় বৃদ্ধ লোক সম্পর্কে বলেছেন,
সে তার পক্ষ থেকে হজ করাবে, এর খরচ বহন করবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৮/৫৯৯)
আরেক হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, জুহায়না গোত্রের এক নারী নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমার মা হজের মানত করেছিলেন কিন্তু তা আদায় করার আগেই তিনি মারা গেছেন। আমি কী তার পক্ষ থেকে হজ করবো? নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হ্যাঁ’। তার পক্ষ থেকে তুমি হজ করবে।
যদি তার কোনো ঋণ থাকে তবে কি তুমি তার ঋণ পরিশোধ করতে না? সুতরাং আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো। কেননা আল্লাহ তায়ালাই পাওনা পাওয়ার সর্বাধিক হকদার। (বুখারি)
বদলি হজের কথা বললে অনেকে মনে করেন তা আদায়ের জন্য আলাদা কোনো নিয়ম আছে। তা ঠিক নয়। যেভাবে নিজের হজ আদায় করা হয় সেভাবেই বদলি হজ আদায় করা হয়। পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, নিয়ত ও তালবিয়ার সময় বদলি হজে প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে হজের নিয়ত করা হয়। এরপর হজের সব কাজ এক ও অভিন্ন।
আরও পড়ুন: বেশিরভাগ মানুষ যে ২ কারণে জাহান্নামে যাবে
বদলি হজ কে করাতে পারবেন?
তবে হজের নিয়ম এক হলেও বদলি হজ সংক্রান্ত কিছু বিষয় এমন আছে, যা বদলি হজে প্রেরণকারী ও প্রেরিত উভয়েরই জানা থাকা জরুরি। যেমন- কোনো ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হওয়ার পর সে যদি হজের সময় পায়, কিন্তু কোনো কারণবশত হজ করতে পারেনি।
এরপর এমন ওজর বা প্রতিবন্ধকতা এসে গেল যে তার নিজে গিয়ে হজ করার ক্ষমতা আর রইল না অথবা এমন অসুস্থ হয়ে পড়ল, যা থেকে আর সুস্থ হওয়ার আশা নেই অথবা অন্ধ বা প্রতিবন্ধী হয়ে গেল বা বার্ধক্যের দরুন এমন দুর্বল হয়ে গেল যে এখন তার পক্ষে সফর করা সম্ভব নয়, তখন তার জন্য নিজের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠিয়ে বদলি হজ করাতে পারবে, অথবা মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার নামে বদলি হজ করানোর অসিয়ত করা ফরজ।
বদলি হজ করানোর পর নিজে সুস্থ হয়ে গেলে
বদলি হজের বিষয়ে ব্যাখ্যা হলো, যে সমস্যার কারণে বদলি হজ করানো হলো, ওই ওজর বা সমস্যা বদলি হজ করানোর পর দূর হয়ে গেলে আবার স্বয়ং তার হজ আদায় করা ফরজ হয়ে যাবে। আর আগের বদলি হজটি তার নফল হয়ে যাবে। (আহকামে হজ ১১৮)
যার উপর হজ ফরজ হয়েছে এবং হজ আদায়ের শারীরিক সক্ষমতাও আছে তার নিজে হজ করা জরুরি। এক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে সহজে হজ করানো জায়েজ নয়। বদলি করালে এর মাধ্যমে তার ফরজ হজ আদায় হবে না। (হিদায়া ১/২৯৬; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৪)
হজরত আলী রা. অতিশয় বৃদ্ধ লোক সম্পর্কে বলেছেন, সে তার পক্ষ থেকে হজ করাবে ও এর খরচ বহন করবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৮/৫৯৯) আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬১; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৩৪
হজ করতে গিয়ে মারা গেলে
কারো উপর হজ ফরজ হয়েছে এবং সে হজের উদ্দেশ্যে মক্কা শরিফে পৌঁছেছে, কিন্তু হজের মূল সময়ের আগেই তার মৃত্যু এসে গেছে-এই ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে বদলি হজের অসিয়ত করার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে তার উপর থেকে হজ রহিত হয়ে যায়। কেননা, সে হজ আদায়ের সুযোগ পায়নি। (ফাতহুল কাদির ২/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৪; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩)
আরও পড়ুন: আয়েশা (রা.) ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার
যে-সব কারণে বদলি হজ করাতে পারবে
১. ফরজ হওয়ার পর আদায়ের সুযোগ পাওয়ার আগেই মৃত্যু এসে গেলে। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি থেকে হজ রহিত হয়ে যায়। সুতরাং তার জন্য মৃত্যুর সময় হজের অসিয়ত করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
২. কেউ জোরপূর্বক আটকে রাখলে বা হজের সফরে যেতে না দিলে।
৩. এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে, যা থেকে সুস্থতা লাভের আশা নেই। যেমন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে, অন্ধ বা খোঁড়া হয়ে গেলে কিংবা বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা এত বেশি হলে যে, নিজে বাহনের উপর আরোহণ করতে পারে না।
৪. রাস্তা অনিরাপদ হলে। অর্থাৎ সফর করতে গেলে যদি জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
৫. নারী তার হজের সফরে স্বামী বা উপযুক্ত মাহরাম পুরুষ সঙ্গী না পেলে।