বছরজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশ

৩ সপ্তাহ আগে
বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মকভাবে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বছরজুড়েই বন্যা, সামুদ্রিক সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ ও প্রবল বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে হয় এই দেশের মানুষকে। বিশেষ করে মে থেকে শুরু করে আগস্ট- এই চার মাসে ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ ও দফায় দফায় বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। আক্রান্ত হন কোটি কোটি মানুষ। বিপুল ক্ষতি হয় অর্থনীতির।

২০২৪ সালে দেশে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের পাশাপাশি আলোচিত ছিল তাপদাহ। এছাড়া মে থেকে আগস্ট মাসজুড়ে দফায় দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। তবে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী হিসেবে বিবেচিত হয় আগস্ট মাসে দেশের পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত বন্যা। বিশেষ করে ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চল আক্রান্ত হয় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায়।
 

সব মিলিয়ে দেশে মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব দুর্যোগের মধ্যে ছিল ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা। পাশাপাশি পুরো গ্রীষ্মকালজুড়েই মানুষকে ব্যাপক ভোগায় তীব্র গরম ও তাপপ্রবাহ।


বছরজুড়েই মানুষকে ভোগায় দাবদাহ


দিন দিন বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে লেখা থাকবে ২০২৪ সাল। চলতি বছরই জুন থেকে আগস্ট মাসে রেকর্ড উষ্ণতা দেখেছে বিশ্ব। এসময় বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইতিহাসে এর আগে কখনও তাপমাত্রা এই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির এই প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।


চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় শুরু হয় মৌসুমের প্রথম দাবদাহ। সে সময় চলছিল বাংলা ১৪৩০ সালের চৈত্র মাস। সাধারণ চৈত্র মাস থেকে দেশে গরম পড়তে শুরু করলেও চলতি বছরের মার্চ মাসে যেন গরমটা একটু আগেভাগেই পড়তে শুরু করেছিল। এমনকি মার্চের মাঝামাঝিতে রীতিমতো দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দাবদাহ। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে ১৬ মার্চ থেকে বইতে শুরু করে দাবদাহ। 

 

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় আবারও তাপমাত্রা স্পর্শ করল ৪০ ডিগ্রি, দিনে-রাতে সমান গরম


পরবর্তীতে এপ্রিল মাসের পুরোটা সময়জুড়ে আরেক দফা টানা দাবদাহের কবলে পড়ে দেশ। এর আগে দেশের ইতিহাসে সবশেষ ১৯৪৮ সালে এত লম্বা সময় ধরে অব্যাহত ছিল তাপপ্রবাহ। এপ্রিল মাসে গড়ে দেশের তাপমাত্রা ওঠানামা করে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তবে এবার এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তাপমাত্রা উঠে যায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। ঢাকায় তাপমাত্রা অতিক্রম করে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠানামা করে ৪২ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন। 


তাপপ্রবাহে তৈরি হয় দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি


বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতোই তাপপ্রবাহকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে অভিহিত করা হয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে। পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। আর তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০ এর ওপরে গেলে একে ঘোষণা করা হয় বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে।


বাংলাদেশেও গরমের তীব্রতার কারণে তৈরি হয় দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত।


৪ মের পর এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ফের বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা, মে মাসের মাঝামাঝি সময় ফের টাঙ্গাইল, যশোর, পাবনা, নীলফামারী, রাঙামাটি, ফেনী ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। মার্চ মাসের তাপপ্রবাহের মতো তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পেলেও বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের তীব্রতা অনেক বেশি হারে অনুভূত হতে থাকে।


মে মাসের পর জুন মাসেও দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের খবর পাওয়া যায়। রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গরমে অতিষ্ঠ ছিলো রাজধানীর জনজীবন। রাজশাহীতে ২৩ জুন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের আরও কয়েক অঞ্চলেও তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রির ওপরে। এদিন ঢাকায়ও তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রির ওপরে। 

 

আরও পড়ুন: বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ, স্বস্তি মিলবে কবে


জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ফের আরেক দফা তাপপ্রবাহে আক্রান্ত হয় দেশের অধিকাংশ স্থান। ২৭ জুলাই রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং টাঙ্গাইল, সিলেট ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য জানায় আবহাওয়া অফিস।


মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জেরে আগস্ট মাসে গরমের কষ্ট থেকে কিছুটা রক্ষা পায় দেশবাসী। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এবং তৃতীয় সপ্তাহে ফের মৃদু তাপদাহ প্রবাহিত হয় দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে। রাঙ্গামাটি, ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ২৯টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ২০ সেপ্টেম্বর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সিলেটে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন রাজধানীতে তাপমাত্রা ওঠে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।


সিলেটে নজিরবিহীন শিলাবৃষ্টিতে ভাঙে গাড়ির কাঁচ


২০২৪ এর মার্চ মাস থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত। তবে মার্চের শেষে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন জেলায় আঘাত হানে তীব্র শিলাবৃষ্টি। বিশেষ করে মার্চ মাসের শেষ দিন সিলেটবাসী প্রত্যক্ষ করে নজিরবিহীন শিলাবৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়া কোনো কোনো বরফখণ্ডের ওজন ছিল দুইশ গ্রামেরও বেশি। সিলেট নগরীতে শিলাবৃষ্টির তীব্রতা এত বেশি ছিল যে বরফখণ্ডের আঘাতে ভেঙে যায় গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশার উইন্ডশিল্ডের কাঁচ। বরফখণ্ডের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হন কয়েকজন।


প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় বেশি দেখা গেলেও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই প্রবণতা অনেকটা কমই লক্ষ্য করা যায়। তবে এই মাসে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে আঘাত হানে কালবৈশাখী ঝড়। এর মধ্যে ২০ এপ্রিল ভোলার লালমোহন উপজেলা এবং ২৯ এপ্রিল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় আঘাত হানে কালবৈশাখী ঝড়।  নবীগঞ্জে ঝড়ের সঙ্গে হওয়া শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বোরো ধানের। 

 

আরও পড়ুন: হঠাৎ ঢাকাসহ সারা দেশে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি কেন?


মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে পুরো মাসজুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে। ৯ মে দেশজুড়ে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া দফতর।


জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসেও বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে কালবৈশাখি ঝড়। এসব ঝড়ে বিভিন্ন স্থানের ঘরবাড়ি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও ঘটে হতাহতের ঘটনা।


উপকূলে চোখ রাঙ্গায় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ 


বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বছরজুড়েই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলেও, ২০২৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ ছিল অনেকটাই কম। এ বছর দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাত্র দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ছয় জেলায় প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। পাশাপাশি এসব ঘূর্ণিঝড়ে ফসল ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। ফাইল ছবি


২৬ মে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে দেখানো হয় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। এছাড়া উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও অদূরবর্তী দ্বীপ-চরগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়।


রেমালের প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাস। ঘূর্ণিঝড় রেমালে উপকূলীয় ১৯টি জেলার ১১৯টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন উপকূলীয় এসব উপজেলার ৯৩৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ।


উপকূল ছুঁয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’


ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর কয়েক মাসের বিরতিতে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘দানা’ নামে অভিহিত এই ঘূর্ণিঝড়টি মূলত ভারতের উড়িষ্যা অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতেও। ভোলা ও পটুয়াখালীর কয়েকটি উপজেলায় বিধ্বস্ত হয় বেশ কিছু ঘরবাড়ি। আহত হন বেশ কয়েকজন। ‘দানা’র প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় বৃষ্টিপাত।


দফায় দফায় বন্যায় বিপর্যস্ত দেশ


মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে মে মাস থেকে শুরু করে আগস্ট মাস পর্যন্ত দফায় দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশের বিভিন্ন জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় এক কোটি মানুষ।


২০২৪ এর মে মাসের শেষ সপ্তাহ ও জুন মাসে কয়েক দফা আকস্মিক বন্যার সম্মুখীন হয় সিলেট। মে মাসের শেষে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট জেলার ৫টি উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় জেলার ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর জমির ফসল। বন্ধ ঘোষণা করা হয় সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। চালু করা হয় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। প্লাবিত হয় সিলেট শহরও। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ৩০ মে সকাল থেকে জৈন্তাপুর উপজেলার বাংলা বাজার, রংপানি ও বিলাইমারা এলাকায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয় এই চার উপজেলায়। জৈন্তাপুর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকি সব এলাকাই প্লাবিত হয়। কোথাও কোথাও বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়।


এদিকে এই বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারত থেকে আসা পানিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায়।  সিলেটে বন্যায় আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যায়। সুনামগঞ্জে ১২টি উপজেলায় ১৩০৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যায় আক্রান্ত হন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ। ২৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। ভারত থেকে আসা পানিতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি। প্লাবিত হয় চরসহ নিম্নাঞ্চল। 

 

আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যা ঠেকাতে ইটনা-মিঠামইন সড়ক ভাঙা হবে: উপদেষ্টা ফরিদা


জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ফের বন্যার কবলে পড়ে দেশের ১৫-২০টি জেলা। ৭ জুলাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙ্গামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ।


কুড়িগ্রামে বন্যা প্লাবিত হয় ৪১ ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম। গাইবান্ধায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে জেলা সদরসহ ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৬৮ হাজার পরিবার। টাঙ্গাইলে  ৫টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ১০৮টি গ্রামে নতুন করে বন্যা দেখা দেয়।


স্মরণকালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় আক্রান্ত ফেনী ও নোয়াখালী


তবে ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয় আগস্ট মাসের শেষ দশদিনে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে হওয়া বন্যা। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। এই জেলাগুলোর ৯০ শতাংশ মানুষ বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। ধ্বংস হয় ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর।


মূলত ভারি বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের এগারো জেলার ৭৩টি উপজেলা। বিশেষ করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ আকস্মিকভাবে খুলে দেয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ফেনীতে। এছাড়া উজান থেকে আসা ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের আরও ৫ জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।


প্রলয়ঙ্করী এই বন্যায় প্রাণ হারান প্রায় ৬০ জন মানুষ। সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারান ফেনীতে। ২৩ জনের মৃত্যু ঘটে এই জেলায়। এছাড়া কুমিল্লায় ১৪ জন, নোয়াখালীতে ৯ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজারে একজন করে মৃত্যু হয়। 

 

আরও পড়ুন: ৭ জেলায় বন্যা: তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট, দামের ঊর্ধ্বগতি


বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বন্যায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাত হাজার ৭২২ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১ হাজার ১০১টি ব্রিজ ও কালভার্ট।

 

আগস্ট মাসের বন্যায় পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি। সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয় নোয়াখালী জেলায়। সব মিলিয়ে বন্যায় এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশের সমান।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন