বৃহস্পতিবার (১ মে) ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের আছিয়ার বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
সুন্দর সংসার হবে, এ আশায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেন লাবনী। কিন্তু ফুলশয্যার রাতেই স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নববধূ। বাসরের পরিবর্তে বাকরুদ্ধ হয়ে বরের মরদেহের পাশে বসে থেকে রাত কাটাতে হয়েছে ওই নববধূকে।
শুক্রবার (২ মে) বিকেলে মেহেদী মাখা হাত, পরনে লাল শাড়ি ও অশ্রু ভেজা চোখের অপলক দৃষ্টিতে শেষবারের মতো মৃত বরকে (স্বামী) বিদায় জানাতে হয়েছে লাবনী আক্তারকে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কবির মামুদ গ্রামের শাহ জামালের মেয়ে লাবনী আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের আছিয়ার বাজার এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে খালেকুজ্জামান ডিউটের (৪২) বিয়ে সম্পন্ন হয়।
মৃত খালেকুজ্জামান ডিউট ফুলবাড়ী উপজেলার রামপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিয়ের রাতেই আলোকসজ্জার বিদ্যুতে বরের মৃত্যু, নির্বাক নববধূ!
বিয়ে অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সারাদিন দুই পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে আপ্যায়নসহ নানা আনন্দ উৎসব চলছিল। বরের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পাড়া প্রতিবেশীদের খাওয়া-দাওয়া শেষে আত্মীয় স্বজনরাও অনেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে নববধূ মেহেদী মাখা হাত, পরনে লাল শাড়ি পড়িয়ে বাসর (ফুলশয্যা) রাতে বিছানায় বসে বরের জন্য অপেক্ষা করছিল। বর খালেকুজ্জামান ডিউট বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা শেষে রাত ১২টার দিকে বাসর ঘরে প্রবেশ করে নববধূর কাছে এক গ্লাস পানি চান। পানি চাওয়ার মুহূর্তে চিৎকার দিয়ে মেজোতে পড়ে যান। পরে নববধূর আত্মচিৎকারে বাড়ির লোকজন এসে বর ডিউটকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পায়নি। পরে বাড়ির লোকজন নিশ্চিত হন হৃদ্রোগে তার মৃত্যু হয়েছে।
নববধূর চাচা সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, ‘খালেকুজ্জামান ডিউট প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী জান্নাতি আক্তার মুক্তা। তার ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ায় বৃহস্পতিবার আমার ভাতিজির সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। কে জানতো বিয়ের রাতেই তার মৃত্যু হবে। অল্প বয়সে আমার ভাতিজি বিধবা হলেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। এটা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।’
শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম মিয়া শোহেল খালেকুজ্জামান ডিউটের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নিয়তির উপরে তো কারো হাত নেই। তবে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা খুবই কম দেখা যায়। বাসর রাতেই স্ত্রী বিধবা! খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। শুক্রবার বিকেল ৩টায় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’