ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা: আসামির ফেসবুক লাইভ

১ সপ্তাহে আগে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষার ওপর হামলার অভিযোগে আলোচিত সাগর কাজী অজ্ঞাতস্থান থেকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিএনপি নেতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সোমবার (২ জুন) সকালে প্রায় ২০ মিনিটের ওই লাইভে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে দায় চাপান বিএনপির নগরকান্দা উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার ওপর। লাইভের পরপরই তিনি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেন।

 

ফেসবুক লাইভে সাগর কাজী বলেন, ‘এখানে রাজনীতি করতেছেন বদিউজ্জামান তারা মোল্যা। তিনি রাজনৈতিক ইস্যু করে ফেলছেন। তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, নিজে শালিস করেছেন, তাকে অমান্য করে বৈশাখী।’

 

বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান তারা মোল্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সে আমাকে এখন চিনে না, আমাকে জড়িয়ে দিচ্ছে। আরে মিয়া আমারে চিনেন না, আপনার সাথে ব্যানার করলাম, বিএনপির যখন ব্যানার করলাম, আপনি তখন চিনেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখন আমি বিপদে পড়েছি, আমাকে চিনেন না। আমার ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন?’

 

তিনি আরও বলেন, ‘তারা মোল্যা সেদিন বলেছেন, বিএনপির কোনো লোক ছিল না ওখানে, কিন্তু সব তারা মোল্যার লোকজন ছিল। তারা মোল্যা শেল্টার দিয়ে সবকিছু করাইছেন।’

 

এ সময় সাগর কাজী মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আর আব্বু নাকি পিটাইছি, একটা মানুষকে যদি ২০ থেকে ২৫ মিনিট পেটানো হয় তাহলে তার এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকা উচিৎ। আমাদের পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড নষ্ট করার জন্য মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন আমার বাড়িতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‍্যাব আসতেছে।’

 

মারধরের শিকার বৈশাখীকে জড়িয়ে। সাগর কাজী দাবি করেন, ‘আপনার (তারা মোল্যা) সাথে ব্যানার করলাম, তখন চিনলেন। এখন আমি বিপদে, আমাকে চিনেন না!’ বিএনপির সাথে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করা এবং তাকে দায়ী করার প্রেক্ষিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাগর।

 

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীকে মারধরে তিন মামলা, ওসি প্রত্যাহার

 

সাগর লাইভে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে নিজে ছিলেন তারা মোল্যা। নিজেই সালিশ করেছেন। এখন বলেন তিনি ছিলেন না। আমি তো তার নির্দেশ অমান্য করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সে এখন বলছে, বিএনপির কেউ ছিল না। অথচ তার লোকজনই তো ছিল।’

 

ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান তারা মোল্য বলেন, ‘ওতো (সাগর কাজী) আমাকে আর বৈশাখী নিয়ে যেসব কথা বলছে, তাহলে বোঝেন কেমন লোক। কারণ, সাগর যুবলীগ নেতা ফরহাদের লোক। ওরা এখনও চাচ্ছে যে বিএনপিকে কিভাবে হেনস্তা করা যায়। আমার দল করলে অবশ্যই চিনতাম। ওদের আমার দলে মিশিয়েতো আমি দল থেকে বহিস্কার হতে চাই না।’

 

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৩০ মে) বিকালে ফরিদপুরের নগরকান্দার ভবুকদিয়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে সাগর কাজী, তার বাবা সেকেন কাজীসহ স্থানীয় বিএনপি নেতার সমর্থকদের নাম উঠে আসে।

 

বৈশাখীর দাবি, তার ছোট বোনকে স্থানীয় শরিফ বেপারী উত্ত্যক্ত করছিল। পুলিশ তাকে আটক করলে উত্তেজিত হয়ে সাগর ও তার লোকজন হামলা চালায়। পরে রাত ১০টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

 

এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। বৈশাখী দুটি মামলার বাদী, আর একটি করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে শরিফ বেপারীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।

 

মারধরের শিকার বৈশাখী বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি। তার মাথা ও গলায় আঘাতের কারণে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পেছনে যারা, তারা এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, এখন বিএনপি করে। আমরা বিচার চাই-দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন