ফরিদপুরে ডোবায় মাদ্রাসাছাত্রের বস্তাবন্দি মরদেহ, হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন যেভাবে

১ সপ্তাহে আগে
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ডোবা থেকে বস্তাবন্দি মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আমির হামজার (১৩) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ফরহাদ রেজা (১৬) নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে জানিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. আজম খান বলছেন, একটি কাঁথার সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়।

জানা যায়, নিহত মাদরাসাছাত্র আমির হামজা আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের সায়েমউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে ও উপজেলার চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানার জামাতখানা বিভাগের দ্বিতীয় জামাতের ছাত্র ছিল। আর গ্রেফতার ফরহাদ রেজা উপজেলার চর চান্দড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ফকিরের ছেলে। ফরহাদও একই মাদরাসার শিক্ষার্থী। তারা দুজন একই ক্লাসের পড়ালেখা করে এবং দুইজন ভালো বন্ধুও।

 

আলফাডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (১৯ অক্টোবর) মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয় আমির হামজা। খোঁজাখুঁজির পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদরাসার পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় বস্তাবন্দি অবস্থায় তার মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পরদিন বুধবার (২২ অক্টোবর) ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরপর এ হত্যা মামলায় তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিশোর ফরহাদকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত কিশোরের ব্যবহৃত একটি কাঁথার সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়।

 

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আমির হামজার কাছ থেকে তার বন্ধু ফরহাদ রেজা মাঝে মধ্যেই টাকা ধার নিত। সবশেষ সে ৫০ টাকা ধার নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ টাকা পরিশোধ করেছিল। ঘটনার দিন বাকি ২০ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে তর্কে-বিতর্কে আমির হামজা গালিগালাজ করায় ফরহাদ প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে দুইজন তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে আমির হামজার গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফরহাদ।

 

আরও পড়ুন: মাদকের টাকার জন্য বাবাকে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার

 

গ্রেফতার কিশোরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আজম খান বলেন, মাদরাসার পাশে একটি বাগান থেকে গ্রেফতার কিশোরের বাড়ি প্রায় ৫০০ গজ দূরে। ওই বাগানে টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হামজার গলা টিপে ধরে ফরহাদ। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। ঘটনার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলে ওই কিশোলের মরদেহ বাগানে ফেলে রেখে মাদরাসায় ফিরে যায় ফরহাদ। মাদরাসায় গিয়ে হাজিরা দিয়ে মাদরাসা থেকে একটি কাঁথা নিয়ে আবার বাগানে যায়। এরপর নিজের বাড়ি থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা এনে হামজার মরদেহ বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে পাঁচটি ইট ভরে দেয়, যাতে সেটি পানিতে না ভাসে। পরে বস্তাটি বাগানের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পুকুর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে এলাকাবাসী বস্তাটি দেখতে পায়। পরে পুলিশ গিয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।

 

এএসপি বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ছিল। এ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য চারটি আলাদা টিম গঠন করা হয়। আমির হামজা ওইদিন বিকেলে কার সঙ্গে সাইকেলে উঠেছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ওই কিশোরের ব্যবহৃত কাঁথার মাধ্যমে হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তবে এ হত্যার পেছনে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জনকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা

 

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জালাল আলম বলেন, এ ঘটনায় হামজার বাবা সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস বাদী হয়ে বুধবার দিবাগত রাতে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ওই কিশোরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন