প্রভাবশালীদের কারণে মরতে বসেছে ভুলুয়া নদী

১ সপ্তাহে আগে
লক্ষ্মীপুরে এক সময়ের খরস্রোতা ভুলুয়া নদী, এখন প্রায় মৃত। নাব্য সংকট ও অবৈধ দখল আর প্রভাবশালীদের বাঁধের কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর প্রশস্ততা। দীর্ঘ বছর ধরে খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি শুকিয়ে যায়, এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।

নদীর ওপর প্রভাবশালীদের বাঁধ নির্মাণের কারণে বর্ষায় সৃষ্টি হয় জলবদ্ধতা। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে নদীকেন্দ্রীক জীববৈচিত্র্য। এঅবস্থায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ বরাদ্দ পেলে নদী খননের কাজ শুরু হবে।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা এলাকায় ভুলুয়া নদীতে অসংখ্য বাঁশ ও গাছের ডালপালা পুঁতে রাখা হয়েছে। অচেনা যে কোনো ব্যক্তির কাছে দেখে মনে হবে কোনো জলাশয়ে মাছের অভায়ারণ্যের জন্য এমন পদ্ধতি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দখলদারদের কবলে পড়ে ভুলুয়া নদী এমন করুণদশা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে ভুলুয়া নদী। ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর প্রস্থ ছিল প্রায় ৩০০ মিটার। দখল, অবৈধ বাঁধ নির্মাণ আর পলি জমে নদীর প্রস্থ এখন দাঁড়িয়েছে ৬৮ মিটারে। দীর্ঘ বছর ধরে খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে এখন হেঁটেই পার হওয়া যায় নদী। পানির অভাবে হুমকির মুখে মাছসহ নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র‌্য। এর ফলে কমে গেছে আশপাশের কৃষি উৎপাদনও।

আরও পড়ুন: মেঘনায় আবারও ভেসে উঠছে মরা মাছ, নদীপাড়ে দুর্গন্ধ

স্থানীয়রা জানালেন, অবৈধ দখল আর প্রভাবশালীদের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভুলুয়া নদীতে এখন আর জোয়ার-ভাটা নেই। এতে করে ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। আবার প্রভাবশালীদের অবৈধ বাঁধের কারণে বর্ষায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুই মৌসুমেই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের।


কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, এক সময় নদীটির বুকে বড় সাম্পান চলাচল করতো। জাল ফেলে মাছ ধরে আমিষের চাহিদা মেটানোসহ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা। আর এখন প্রভাবশালীরা এতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে দখল করে রেখেছে। যার কারণে এখন আর নদীতে নেই জোয়ার-ভাটা। আবার বর্ষার মৌসুমে সৃষ্টি জলাবদ্ধতা। এতে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।


একই এলাকার বাসিন্দা আমানত উল্ল্যাহ বলেন, অবৈধ দখল ও খননের অভাবে এক সময়ের খর¯্রােতা ভুলুয়া নদী এখন মৃত। নদীতে পানি না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এতে ব্যহত হচ্ছে ইরি-বোরো চাষাবাদ। খালি পড়ে থাকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষক। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও নদীটি খননের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।


কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা এলাকার গণমাধ্যম কর্মী মোখলেছুর রহমান ধনু বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে নদটি খনন না হওয়ায় ও অবৈধ দখলদারদের কারণে ব্যহত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার অবহিত করা হলেও কার্যকরি কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।


তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত উজ জামান বলেন, অবৈধ দখলদার যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুলুয়া নদীর প্রমত্তা ভাব ফিরে আনার জন্য একটি ডেলিকেটেড প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার বলেও জানান, জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন: জোড়াতালি দিয়ে কালভার্টটি টিকিয়ে রেখেছেন স্থানীয়রা, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

এদিকে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, ভুলুয়া নদীর ১৮ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ভুলুয়া নদীটি খননের বিষয়ে একটি সমন্বিত স্টাডি চলছে। নদীটি খনন করা গেলে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। একই সঙ্গে মিষ্টি পানি ধরে রাখার মাধ্যমে কৃষি কাজকে প্রমোট করা যাবে। বরাদ্দ পেলে এলাকার মানুষের উপকারের জন্য, কৃষি ভুমির উপকারের জন্য শিগগিরই নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।


লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মানুষের দুঃখ এ ভুলুয়া নদী। একসময়ের খরস্রোতা এই ভুলুয়া নদী দখল ও দূষণের কবলে পড়ে এখন প্রায় মৃত। নদীটি খননের উদ্যোগ নিলে, এ অঞ্চলের কৃষি কাজের যেমন আমূল পরিবর্তন আসবে, তেমনি ভাগ্য বদলাবে হাজারও কৃষকের।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন