সোলার অরবিটারের পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায়, সূর্যের ঝলমলে উজ্জ্বল বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশে তাপমাত্রা ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। সূর্যের দক্ষিণ মেরুর মাঝে মাঝে রয়েছে অন্ধকার মেঘের মতো গ্যাসের স্তর, যেগুলো অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা হলেও প্রায় ১ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়।
সূর্যের তীব্র অবস্থা সম্পর্কে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সূর্যের তীব্রতার কারণে কখনো কখনো পৃথিবীর স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ গ্রিডে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ইএসএর বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ক্যারল মান্ডেল বলেন, ‘আজ আমরা মানবজাতিকে সূর্যের মেরুর প্রথম দৃশ্য দেখাচ্ছি। সূর্য আমাদের নিকটতম নক্ষত্র এবং এটি আধুনিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকিও। তাই এটি কীভাবে কাজ করে এবং কেমন আচরণ করে, তা জানা জরুরি।’
পৃথিবী থেকে সূর্যকে এটি উজ্জ্বল চাকতির মতো মনে হয়। তবে বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সি ও ফিল্টার ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সূর্যের প্রকৃত রূপ দেখতে পান। এটি একটি গতিশীল তরল বল, যার উপরিভাগে চৌম্বকক্ষেত্র গড়ে উঠে ঘুরছে এবং বায়ুমণ্ডলে অগ্নিশিখা ও গ্যাসের লুপ তৈরি করে। এসব চৌম্বকক্ষেত্রই নির্ধারণ করে কখন সূর্য তীব্র রূপ ধারণ করে এবং পৃথিবীর দিকে বিভিন্ন কণিকা ছুড়ে দেয়।
আরও পড়ুন: নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক গুটিয়ে নিতে হবে মোবাইল অপারেটরদের!
সূর্যের একটি শান্ত সময়কাল আছে। এই সময়ে এটির চৌম্বকক্ষেত্র নির্দিষ্ট উত্তর ও দক্ষিণ মেরু নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে থাকে। এই সময়ে সূর্যে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে না। তবে প্রতি ১১ বছর অন্তর এই মেরুগুলো বদলে যায় এবং তখন চৌম্বকক্ষেত্রগুলো জটিল ও বিশৃঙ্খল হয়ে যায়।
চৌম্বকক্ষেত্র জটিল ও বিশৃঙ্খল হলে সূর্য তার এই অতিরিক্ত শক্তি বের করে দিতে চেষ্টা করে। এর ফলে সূর্য থেকে শক্তিশালী সৌরঝড় পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। এই ঝড়গুলো স্যাটেলাইট যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং বিদ্যুৎ গ্রিডে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে একই সময়ে এসব ঘটনার ফলে দেখা যায় চোখ ধাঁধানো অরোরা বা মেরুজ্যোতি।
সোলার অরবিটারের এই ভিডিও মানবজাতির বড় ধরনের উপকারে আসবে। কারণ সূর্যের এই কার্যকলাপের পূর্বাভাস দিতে এত দিন কম্পিউটার মডেল তৈরি সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ মেরুর দিকে চৌম্বকক্ষেত্রের সঞ্চালন নিয়ে তথ্য ছিল না। তবে এখন এই ভিডিওর মাধ্যমে এখন সেই তথ্য চলে এসেছে।
এই তথ্যের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সূর্যের কার্যক্রমের কম্পিউটার মডেল তৈরি করতে পারবেন, যা দিয়ে ‘স্পেস ওয়েদার’ বা মহাকাশীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যাবে। এতে উপকৃত হবে স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা এবং অরোরা পর্যবেক্ষকেরা।