দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় এক অতন্দ্র প্রহরীর নাম বাংলাদেশ পুলিশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালির মুক্তির সংগ্রামেও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে এই বাহিনীর।
কিন্তু ক্ষমতার লড়াইয়ে সব সময়ই পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে। বিশেষ করে গেল ১৬ বছরে হাসিনা সরকারের মদদে দমনপীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বাচনে কারচুপিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যেখানে ব্যবহার করা হয়নি পুলিশকে। আর জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা আর প্রগতির স্লোগানধারী এই বাহিনীকে। আন্দোলন দমাতে চালানো হয় নির্বিচারে গুলি। অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদদের পাশাপাশি জীবনাবসান হয় অনেক পুলিশ সদস্যেরও।
এহেন কর্মকাণ্ডে যখন তলানিতে বাহিনীটির ভাবমূর্তি, তখন ধাক্কা সামলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা করছে পুলিশ সদস্যরা। জুলাইয়ের কলঙ্ক ঘোচাতে গেল ৩ অক্টোবর গঠন করা হয় পুলিশ সংস্কার কমিশন। আর নতুন বাংলাদেশে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই বাহিনীকে পুরেনো মোড়কে আর দেখতে চান না সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: ইভিএম বাতিলসহ ব্যালটে থাকতে পারে ‘না’ ভোট
তারা বলছেন,
পুলিশ আমাদের বন্ধু, তারা আমাদের শত্রু নয়। দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য তাদের কাজ করা উচিত। আইনগত প্রয়োগটা যেন ঠিক মতো হয়, সেটাই আমরা চাচ্ছি।
মানুষের চাহিদা বিবেচনায় এবার স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে পুলিশ সদরদফতর। জনবান্ধব পুলিশ গড়তে আইন সংশোধন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেকোনো রাজনৈতিক তদবির বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে ওই খসড়ায়। খুব শিগগিরইই তা পাঠানো হবে পুলিশ সংস্কার কমিশনকে।
বাংলাদেশ পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন,
পুলিশ কমিশন বা পাবলিক সেফটি কমিশন-- যে নামেই বলি না কেন, কমিশন গঠনের মাধ্যমে এমন একটি মেকানিজম তৈরি করা, যাতে পুলিশ তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আইনের আলোকে জনগণের স্বার্থে করতে পারে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলিশ সংস্কারে শুধু কমিশন গঠন করলেই হবে না, প্রয়োজন অধ্যাদেশ ও আইন সংশোধনের। আর গণ-অভুত্থানের মধ্য দিয়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে, পুলিশ বাহিনীকেও নতুনভাবে দেখতে চান সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: চোরাই ২৫ মোবাইল ফোন উদ্ধার করে মালিককে ফিরিয়ে দিল পুলিশ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা রাষ্ট্রীয় বাহিনীটির মূল উদ্দেশ্যই হতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা। আর রাজনীতিতে পুলিশের ব্যবহার বন্ধ করতে না পারলে কোনো উদ্যোগেই সুফল আসবে না।
ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন,
পুলিশের যে কাঠামো কিংবা অন্যান্য সব কিছু পর্যালোচনা করে একটা সংশোধন করা বা যেখানে ঢেলে সাজানো দরকার, সেখানে ঢেলে সাজাতে হবে। এই সব কিছুর লক্ষ্য হবে, জনগণকে সেবা দেয়া।
অতীতের সব গ্লানি ভুলে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনকেই মূলনীতি হিসেবে অনুসরণ করে পুলিশ হয়ে উঠবে প্রকৃতপক্ষেই জনগণের বন্ধু-- এমনটিই প্রত্যাশা সবার।
]]>