পিআর পদ্ধতি নিয়ে কমিশন বৈঠকে বাদানুবাদ, উত্তেজনা

৩ দিন আগে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি এবং সমমনা কয়েকটি দলের নোট অব ডিসেন্টসহ ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ সিদ্ধান্ত পাস হয়েছে, যা নির্বাচিত হবে পিআর পদ্ধতিতে। তবে বৃহস্পতিবারের (৩১ জুলাই) এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের সঙ্গে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে।

পরে এ বিষয়ে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ ও এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

 

বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে, বেলা ১টা ৫০ মিনিটের পরে পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

 

তিনি এ সময় জানান, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চায় না বিএনপি। উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা অনির্বাচিত হবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না।

 

তার বক্তব্য শেষে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ভোটের সংখ্যানুপাতিকের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে বলে মন্তব্য করেন। পরে সালাহউদ্দিন আহমদ একটি ব্যাখ্যা দেন।

 

তখনই জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়াই জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’

 

এ অবস্থায় রাসিন ও হুদা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

 

পরে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ, আজকে যদি সে প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।’

 

আরও পড়ুন: ১০০ আসনের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কমিশনের

 

তারপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তিনি (এহসানুল হুদা) এই কথা বলতেই পারেন না।’ এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ তার পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন।

 

পরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।’ আখতার তখনো বলতে থাকেন, ‘সবাইক নিয়ে আমরা গণ–অভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা মাঠে নেমে এল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য ওনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

 

এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা হুদা ভাই, আপনি সরি বলেন।’ এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জেনায়েদ সাকি কিছু বলতে চািইলে আলী রীয়াজ তাকে থামিয়ে দেন।

 

এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ এহসানুল হুদাকে বলেন, ‘কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে তার জন্য স্যরি বলেন।’

 

তখন এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম, ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল? তারপরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।’

 

এরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ঘোষণা করেন।

 

আরও পড়ুন: প্রথম পর্বের আলোচনায় যে ৬২ বিষয়ে একমত রাজনৈতিক দল

 

পরে সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসন বিশিষ্ট। এই সদস্যরা মনোনীত হবেন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর), অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনে দলগুলো যে ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন করা হবে।

 

তবে এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং জোটের সদস্যরা। তারা বলেছে, উচ্চকক্ষে সদস্য মনোনীত হতে হবে জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে। 



উচ্চকক্ষের ধারণার বিরোধিতা করেছে সিপিবি, বাসদও। তারাও এ বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন