দিনটিতে শান্তির আহ্বানে হাজির হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। কিন্তু পরমাণু অস্ত্র রাখার প্রবণতা দেখে হতাশ সেই বিভীষিকার সাক্ষী এখনও বেঁচে থাকা হিবাকুশারা। তাদের মতে, এবারই হয়তো শেষবারের মতো একসঙ্গেএ স্মরণ করলেন তারা ভয়াবহ সেই দিনটিকে।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানের হিরোশিমায় লিটল বয় নামে একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন বি-২৯ যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা এ বোমায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণ হারান প্রায় দেড় লাখ মানুষ। শহরের অধিকাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে তেজস্ক্রিয়তার কারণে আরও ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
সেই ভয়াবহ দিনের স্মরণেই ভোররাতে হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন কয়েকজন হিবাকুশা, যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই।
আরও পড়ুন: জাপান সাগরে চীন-রাশিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া শুরু
হিবাকুশা শব্দটি মূলত ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ধূপ জ্বেলে, হাত জোড় করে স্মরণ করলেন স্বজনদের, যারা আর কখনো ফিরে আসেননি।
পিস মেমোরিয়াল পার্কে শ্রদ্ধা জানাতে আসা এক হিবাকুশা বলছিলেন, ‘আর ১০ বছর, ২০ বছর পর সেই ভয়াবহ দিনের এই দুঃখ আর যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মতো হয়তো আর কেউ থাকবেন না। তাই যতটা পারি, আমি এটা ভাগ করে যেতে চাই।’
বেলা গড়াতেই পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজন করা হয় ৮০তম স্মরণানুষ্ঠান। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে এক মিনিটের নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। অংশগ্রহণ করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।
বর্তমান বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল ও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। এই কারণেই আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির আওতায় পারমাণবিক যুদ্ধবিহীন এবং শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন একটি বিশ্ব গড়ে তোলার।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘মানবপুতুলরা’ এবার নাচবে জাপানে
অন্যদিকে পার্কের পাশে গান গেয়ে, গোলাপের পাঁপড়ি নদীতে ভাসিয়ে শান্তির বার্তা ছড়ান স্থানীয় শান্তি কর্মীরা। কেউ কেউ ছবি এঁকে বোঝাতে চাইলেন ইতিহাসের ভয়াবহতা।
আরেক কোণে এক শিশু তার বাবার হাত ধরে প্রথমবারের মতো এসেছে শ্রদ্ধা জানাতে। আগামী প্রজন্ম যেন এই ইতিহাস ভুলে না যায়, সেই দায় নিয়েই যেন দাঁড়িয়েছিল তারা।
]]>