উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া, চুলকাঠি, ফকিরহাট সদর ও মানসা বাজার ঘুরে পানের দরপতনের খবর দেখা গেছে। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম কমে অর্ধেকে নেমেছে। এতে প্রায় এক তৃতীয়াংশ চাষি পেশা ছাড়ছেন বলে চাষিরা জানান।
ফকিরহাটে অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ টাউন নওয়াপাড়া পানের হাটে সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত পান বিক্রি হয়। প্রতি হাটে এখানে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কুড়ি (এক কুড়িতে ৫১২০টি পান) বিক্রি হয়। সকালে টাউন নওয়াপাড়া পানের হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের কর্মব্যস্ততা।
চাষিদের তিন ধরনের (গ্রেড) পান কিনছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারী ক্রেতারা। প্রতিকুড়ি (৫১২০টি) বড় পান ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা, মাঝারি পান ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা এবং ছোট পান ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কুচা পান (ছোট পান) কেউ কিনছেন। হাটে পাইকার গতবছরের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: বরিশালে পান চাষে লোকসানের শঙ্কা
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, গতবছর একই সময় প্রতিকুড়ি বড় পান ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা, মাঝারি পান ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা এবং ছোট পান ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কুচা পান ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
টাউন নওয়াপাড়া পানের হাটে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে পান কিনে নিয়ে যান। ছবি: সময় সংবাদ
উপজেলার শামবাগাত গ্রামের পান চাষি আবু সাইদ, বালিয়াডাংগা গ্রামের আজহার শেখ, পিলজংগ গ্রামের মামুন সরদার, টাউন নওয়াড়া গ্রামের নিতাই বাগদীসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গতবছরের চেয়ে এবছর বরজের কাজে ব্যবহৃত উলু, সলাকা, হাড়ি (বর্গা জমি) খরচ, খৈল ইত্যাদির দাম প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে।
অন্যদিকে পানের দাম গতবারের চেয়ে অর্ধেকের কম। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা পান চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। উপজেলার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কৃষক পান চাষ ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন বা পান চাষে জমির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: তিন লাখ টাকার পান এবছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০ হাজারে, দিশেহারা চাঁদপুরের চাষিরা
পান চাষি সনাতন দাস, জামাল শেখ সহ অনেকে জানান, বরজে ছোট ও কুচা পান নষ্ট হচ্ছে। শ্রমিকের দাম উঠবেনা বলে তারা না কেটে ফেলে রেখেছেন। পান বরজেই নষ্ট হচ্ছে। মূলত রফতানি ও পাইকারের পান ক্রয় কমে যাওয়ায় পানের বাজারে ধস নেমেছে। এতে হতাশ চাষিরা বরজ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
পাইকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ হাট থেকে পান নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করেন। কিন্তু এবছর ওইসব মোকামে পানের চাহিদা কম। বিদেশে রফতানিতে ভাটা লেগেছে। ফলে তারা পান কিনতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন।
ফকিরহাট কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় চলতি বছর ৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন পান উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি। ১ হাজার ১১২ একর জমিতে ছোট বড় মিলে ৩ হাজার ৯০০টি পানের বরজ রয়েছে। ফকিরহাটে ৩ হাজার ১৫০ জন কৃষক পান চাষ করেন। তবে পান চাষ ও বিপননের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পান চাষের সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময় হলো জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। এসময় সাধারণত পানের দাম কম থাকে। কিন্তু এবছর নভেম্বর মাসেও পানের দাম তুলনামূলক কম। পান চাষে কৃষকদের প্রণোদনা সহায়তার কোনো প্রকল্প ফকিরহাটে নেই। তবে কৃষি অফিস থেকে তাদের পান চাষের বিষয়ে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়।
বাগেরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, ‘বিদেশে পান রফতানি কমে যাওয়া, উৎপাদন বৃদ্ধি, পান ক্রয়ের পাইকার কম, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে পানের দাম কমতে পারে। এটি শিল্প পণ্য না হওয়ায় ততটা ফোঁকাস পাচ্ছে না।

২২ ঘন্টা আগে
৩





Bengali (BD) ·
English (US) ·