পাতকুয়ায় পানি নেই, সোয়া দুই কোটি টাকা জলে!

২২ ঘন্টা আগে
শেরপুরে কৃষি কাজের জন্য বিএডিসির সৌরচালিত পাতকুয়া বা ডাগওয়েল এখন কোনো কাজেই আসছে না। নির্মাণের পর এই পাতকুয়া দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থেকে কৃষক কিছুটা মুক্তি পেলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে এখন অকেজো হয়ে পড়েছে, চুরি হয়ে গেছে অনেক যন্ত্রপাতিও। কৃষি বিভাগ বলছে, পাতকুয়াগুলো সংস্কার করলে লাভবান হবেন স্থানীয় কৃষকরা।

জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শেরপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় কৃষি আবাদে কৃষকের সেচ নিয়ে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এ সমস্যা নিরসনে নকলা ও নালিতাবাড়ীতে প্রান্তিক কৃষকের সেচ সুবিধা পেতে কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচির অর্থায়নে স্থাপন করা হয়েছিল সৌরচালিত পাতকুয়া বা ডাগওয়েল। এই প্রযুক্তিতে পাতকুয়া থেকে পানি তুলে সেচ দেয়া হতো জমিতে।


প্রতিটি পাতকুয়া থেকে ৪১ জন কৃষক শুষ্ক মৌসুমে বিনা খরচে সবজি ও ধান ক্ষেতে সেচ সুবিধা পায়। ১১৮ ফুট গভীর পাতকুয়া থেকে পানি তুলতে বসানো হয়েছিল তিন হাজার ওয়াট ক্ষমতার বিশেষ সোলার প্যানেল। শুরুর দিকে পানি পাওয়া গেলেও বছর না পেরোতেই যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। সেই থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে এসব পাতকুয়া। গচ্চা যায় সরকারের কয়েক কোটি টাকা। সরকারের সহযোগিতায় আবারও পাতকুয়া চালুর দাবি স্থানীয় কৃষকের।


স্থানীয় কৃষক মো. কালাম মিয়া বলেন, ‘পাতকুয়া যখন চালু করা হয়েছিল তখন আমরা বিনা খরচে জমিতে পানি দিতে পারতাম। কিন্তু কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা আর এই সুবিধা পাই না। অকেজো থাকায় পাতকুয়ার অনেক যন্ত্রপাতি রাতের অন্ধকারে চুরি হয়ে গেছে। এখন যদি সরকারি উদ্যোগে এই পাতকুয়াগুলো মেরামত করে দিতো, তাহলে আমরা আবার ও বিনা খরচে জমিতে সেচ দিতে পারতাম।’


অপর কৃষক মোফাজ্জল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরকারের প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা গচ্চা গেছে। যদি প্রথম থেকেই এগুলোকে তদারকি করা হতো তাহলে এখনও আমরা বিনা খরচে ফসলি জমিতে সেচ সুবিধা পেতাম। দ্রুত এই পাতকুয়াগুলো মেরামত করে প্রান্তিক কৃষকের বিনামূল্যে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’


আরও পড়ুন: টাকার বিনিময়ে সেচ প্রকল্পে ম্যানেজার নিয়োগের অভিযোগ, কৃষকদের ক্ষোভ


এদিকে এ বিষয়ে বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শামীমা নাছরিন কনার সঙ্গে কথা হলে তিনি দায় এড়িয়ে যান এবং বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের দায়িত্বে না।’


তবে, যারা এই পাতকুয়ার দায়িত্বে আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।


জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালকে মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ‘পাতকুয়াগুলো কৃষকের জন্য বেশ উপকারী একটি বিষয়। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এগুলো আবারও সংস্কার করে কার্যকর করা হলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা লাভবান হবেন এবং ওই অঞ্চলে কৃষি আবাদ বৃদ্ধি পাবে।’


২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কাজের বিনিময়ে টাকা কাবিটা প্রকল্পের আওতায় বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে ২৩টি সৌরচালিত পাতকুয়া নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন