শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় মসজিদের ১১টি লোহার সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় ২৭ বস্তা টাকা। আছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও। আর এসব টাকা গণনায় অংশ নেন ব্যাংকের ৬০ কর্মচারীসহ প্রায় ৪০০ মানুষ। টাকা গুনতে লাগে ১০ ঘণ্টা।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের নিচতলায় বিভিন্ন স্থানে থাকা দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। এরপর প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি করে টাকা নেয়া হয় দ্বিতীয় তলায়। মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।
দানবাক্সে পাওয়া ২৯ বস্তা টাকা গণনার কাজে অংশ নেন পাগলা মসজিদ নূরানী কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ও জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার ২৮২ শিক্ষার্থী, ৩৬ জন শিক্ষক, রুপালী ব্যাংকের ৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ প্রায় ৪০০ মানুষ। এবার মিলেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। গণনা শেষে সেনা ও পুলিশ প্রহরায় ধাপে ধাপে টাকা পাঠানো হয় রুপালী ব্যাংকে।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, দিনভর গণনার কাজ চলে এবং যে টাকা গণনা শেষ হয়, সেগুলো হিসাব করে তাৎক্ষণিক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় ব্যাংকে পাঠানো হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, টাকা গণনা কাজে দিনভর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর আগে সবশেষ গত ১৭ আগস্ট মসজিদের দানসিন্দুক থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এরও আগে এ বছরের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ২৯ বস্তা টাকা, চলছে গণনা
এবার ৩ মাস ১৪ দিন পর দানসিন্দুক খোলা হয়। এর আগে ১০টি সিন্দুক ছিল। এবার আরও একটি দানসিন্দুক বাড়ানো হয়েছে। দানের টাকা জমা রাখা হয় মসজিদের নামে খোলা ব্যাংক একাউন্টে। এ টাকা দিয়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।
তবে পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা পাওয়া গেছে সেটি জানাতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। গত বছর ৪ ধাপে পাওয়া গিয়েছিল ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরে। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর এখানে নির্মিত মসজিদটি পাগলা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়। পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এ মসজিদে দান করে থাকেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।