পাখিমারা বিলে সরকার প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পাননি জমির মালিকরা

১ দিন আগে
কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনার সংযোগস্থলের পাখিমারা বিলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে উপকৃত হয়েছেন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। কিন্তু আজও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা সরকারের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পাননি।

জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা রক্ষায় এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে পাখিমারা বিলে টিআরএম চালু করা হয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। এই কার্যক্রম চলে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য অধিগ্রহণ করা হয় ১ হাজার ৫৬২ একর জমি। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে জমির মালিকরা ফসলের কোনো সুযোগ পাননি। উপরন্তু, সরকার যে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারও বড় অংশ এখনও বাকি রয়েছে।

 

স্থানীয় পানি কমিটি ও সুশীল সমাজ বলছে, টিআরএম প্রকল্পটি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনে এসেছে ব্যাপক উন্নয়ন। নদ-নদীগুলো ফিরে পেয়েছে নাব্যতা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়, ভূমি গঠন প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই প্রকল্পের অবদান অনস্বীকার্য।

 

তবে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আবারও যদি টিআরএম চালু না করা হয়, তাহলে কপোতাক্ষ নদ আবারও নাব্যতা হারাবে, আর জনজীবন পড়বে নতুন করে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে।

 

 

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের অভিযোগ, ১০-১২ বছর ধরে তাদের জমিতে কোনো ফসল হয়নি। সেই সাথে এখনও তারা সরকারের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ পুরোপুরি পাননি। তারা দাবি জানিয়েছেন, দ্রুত ন্যায্য ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের।

 

স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘টিআরএম চালু হওয়ায় এই এলাকার প্রায় ৬০ লাখ মানুষ উপকৃত হলেও জমির মালিকরা আজও ক্ষতিপূরণ পায়নি। আবারও যদি টিআরএম চালু না হয়, কপোতাক্ষ নদ নাব্যতা হারাবে, আর মানুষ পড়বে চরম দুর্ভোগে।’

 

তালা উপজেলা পানি কমিটির সেক্রেটারি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘৮ বছর টিআরএম চালু থাকলেও মাত্র দুই বছর ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী ৬ বছরে একটি টাকাও দেয়া হয়নি। জমির মালিকরা ক্ষুব্ধ। টিআরএম আবার চালু না হলে জলাবদ্ধতা বাড়বে, মানুষ বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়বে।’

 

আরও পড়ুন: 
ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের দাবি 
যে দাবিতে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়েছেন তারা

 

জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। টিআরএম প্রকল্পটি ছিল সময়োপযোগী এবং জনগণের উপকারে এসেছে।’

 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত টিআরএম প্রকল্প চলাকালে পাখিমারা বিলের জমির মালিকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ নির্ধারিত হয়েছিল ৪০ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১২ টাকা। এর মধ্যে প্রথম দুই বছরের কিছু অর্থ দিলেও পরবর্তী চার বছরের ২৯ কোটি ৮৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৮ টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে।

 

এছাড়াও ২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার এক টাকাও পায়নি জমির মালিকরা। ফলে জমির মালিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন