পাকিস্তানে প্রতিবাদের খবর দেওয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ

৫ দিন আগে
পাকিস্তানের পুলিশ একজন খ্যাত সাংবাদিককে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ এনেছে। এই সাংবাদিক এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে রাজধানী ইসলামাবাদে বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর সরকারের অভিযানের সময়ে হতাহতের অভিযোগ তদন্ত করছিলেন। এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সঙবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষের লোকেরা কড়া নিন্দা জানিয়েছেন । এই সাংবাদিক মতিউল্লাহ জানের স্বজন ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন যে তিনি এবং তাঁর সহকর্মী সাকিব বশির যখন  “মরদেহ” সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করছিলেন তখন তাঁদেরকে রাজধানীর একটি হাসপাতালের বাইরে থেকে মধ্যরাতের একটু আগেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বশির বৃহস্পতিবার সংবাদদাতাদের বলেন যে তিন ঘন্টা পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং একটি রাস্তায় নামিয়ে  দেওয়া হয়। জান, যিনি টেলিভিশিনে একটি  রাজনৈতিক টক শো সঞ্চালন করেন এবং যার প্রায় চার লক্ষ সাবসক্রাইবার সম্বলিত নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে, তিনি সরকারি ব্যাপারে সেনাবাহিনীর নাক গলানোর অভিযোগ সম্পর্কে একজন পরিচিত সমালোচক। এই মামলার অভিযোগকারী পুলিশ কর্মকর্তা আসিফ আলী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে এই আটক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ,আইন প্রয়োগকারীদের উপর অবসদাচরণ করার এবং মাদক দ্রব্য রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়ই জান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি দৃঢ়তার সঙ্গে  অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এগুলি সবই ভূয়া, হাস্যকর ও বানোয়াট। আমি এমনকী সিগারেটও খাই না”। তিনি আরও বলেন যে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের তাঁর প্রচেষ্টার জন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ আমরা ভয় পাচ্ছিনা এবং আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব”। বশীর ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে তাঁরা যখন “হতাহতদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছিলেন” তখন কালো পোশাক পরা লোকজন এসে তাদের চোখ বেঁধে ফেলে এবং ইসলামাবাদে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ মেডিকাল সাইন্সের পার্কিং’এ রাখা একটি গাড়িতে জোর করে তোলে।   মিডিয়ার সমর্থক গোষ্ঠীগুলি এবং মানবাধিকার কর্মীরা পুলিশের এই কর্মকান্ডের নিন্দা করেছে এবং এই ঘটনায় “ গভীর শংকা” প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের নিরপেক্ষ মানবাধিকার কমিশন জানের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, “ সাংবাদিকদের চুপ করানোর এই কর্তৃত্ববাদী কৌশল শেষ হতে হবে”। দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট উল্লেখ করে যে জান  পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ দলের একটি বিক্ষোভ মিছিলের খবর দেওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক্স’এ সিপিজে বলে, “ আমরা এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের এবং সকল অপরাধীর জবাবদিহিতার আহ্বান জানাচ্ছি। বুধবার গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে জান তাঁর টেলিভিশিন অনুষ্ঠানে বলেন যে বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে তার ফলে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও কয়েক ডজন লোক বুলেটে আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতাল সুত্রে পাওয়া তথ্যের উল্লেখ করেন এবং সরকারকে এই বলে অভিযুক্ত করেন যে হাসপাতালের কর্মী মিডিয়িার কাছে যাতে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ না করে সে জন্য তাদের উপর চাপ প্রযোগ করা হয়। জান সরকারের এই দাবি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন যে সোমবার বিক্ষোভকারীদের যানবহরের একটি গাড়ির আইন প্রয়োগকারী লোকদের উপর দিয়ে চালিয়ে নিলে, আইন প্রয়োগকারীদের অনেকেই নিহত হন। সেই সময়ে কারাগারে বন্দি  সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক ইসলামাবাদে প্রবেশ করে তাঁর মুক্তির দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট করে। এই সাংবাদিক তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাতকার প্রচার করেন। তিনি একজন নিহত লোকের স্বজন। এই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন ওই গাড়িটি ছিল আধা-সামরিক বাহিনীর গাড়ি যেটি কাঁদানে গ্যস শেষ হয়ে যাওয়ায় বিক্ষোভের স্থান ত্যাগ করছিল। তখন তারা নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের চাপা দেয়। সামাজিক মিডিয়ার ভিডিওতে এই বিবরণকেই সমর্থন করে। মঙ্গলবার রাতে পিটিআই সমর্থকদের উপর ঢালাও অভিযান চালানোর আগে বিদ্যূত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। বহু বিদেশি মিডিয়া, সাংবাদিক ও কাছের এলাকার বাশিন্দারা আধা-সামরিক বাহিনী দ্বারা ওই সমাবেশে  প্রচন্ড কাঁদানে গ্যাস, ও বন্দুকের গুলি করার খবর দিয়েছেন। বুধবার সকাল বেলায় সরকার ঘোষণা করে যে তারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে এবং চার ঘন্টা বন্ধ থাকার পর তারা দেশের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে ইসলামাবাদের সড়ক সংযোগ খুলে দেয়। পিটিআই নিরাপত্তা বাহিনীকে সমাবেশে সরাসরি গুলি চালানোর জন্য দায়ী করে এবং বলে যে এর ফলে ৪০ জন নিহত হয়।   পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রী আতাউল্লাহ এবং রাজধানীর পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এই দাবিও অস্বীকার করেন যে তাদের অভিযানের ফলে অসামরিক লোকজন হতাহত হয়েছে।
সম্পূর্ণ পড়ুন