পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়লেও শেষ হয়নি কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনের কাজ

৪ সপ্তাহ আগে
পাঁচবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও দুই বছরের কাজ হয়নি চার বছরেও। এখনও বেশিরভাগ কাজ বাকি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের। ভারতীয় রেলওয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'কালিন্দ' একের পর এক নানা অজুহাত তুলে রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজ পিছিয়ে নিচ্ছে। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর এ রেললাইনের আশানুরূপ কাজ এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে কুলাউড়া ও শাহবাজপুর অংশের রেলপথে স্লিপার ও রেলস্ট্রেক বসানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে, ২০১৮ সালে ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।


বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ১৮৯৬ সালে ব্রিটিশ-ভারত সরকার আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে  মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশনটি চালু করা হয়। দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় চালু থাকার পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ রেললাইনটির বিপর্যয় দেখা দেয়। ২০০৩ সালের দিকে এসে রেল কর্তৃপক্ষ এ রেললাইনে নানাভাবে লোকসান দেখিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়াসহ আশপাশ এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকজনের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন।


এ রেললাইন সংস্কার করে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম চলতে থাকে। এ আন্দোলন সংগ্রামে প্রেক্ষিতে, ২০১১ সালের দিকে এসে রেল কর্তৃপক্ষ এ রেললাইন সংস্কারের উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশ সরকার মিটার গেজ লাইন নির্মাণে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্নের পরিকল্পনা নেয়। তবে পরবর্তী সময়ে  ভারত সরকার  এ কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনটি ভারতের আসামের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। এতে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এসে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণে ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।


একইভাবে এ সেকশনে গার্ডার ব্রিজ ১৭টি ও ৪২টি কালভার্ট নির্মাণ এবং আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু ও ছয়টি স্টেশন ভবন এবং প্ল্যাটফর্ম পুনর্নির্মাণ চুক্তি করা হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকার এলওসির আওতায় ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। আর বাকি ১২২ কোটি টাকা জোগান দেবার সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশ সরকার। সেইমতে দুই বছর মেয়াদে অর্থাৎ ২০২০ সালে কাজ সম্পন্নের চুক্তিতে ভারতীয় রেলওয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'কালিন্দ' কাজের দায়িত্ব নেয়।


প্রথম (২০১৮ থেকে ২০২০ সাল) দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফা ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েও রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। কালিন্দ রেলওয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান শুরু থেকে ১১টি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজ শুরু করে। তবে দীর্ঘদিন নানা টালবাহনায় কাজের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি।


আরও পড়ুন: রেললাইনে ভয়ঙ্কর ফাটল, ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন


সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর এ রেললাইনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে কুলাউড়া ও শাহবাজপুর অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলপথে স্লিপার ও রেলস্ট্রেক বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

 

সম্প্রতি কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্নির্মাণ প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় সংবাদের কথা হয়। শাহবাজপুর গ্রামের হারিছ মিয়াসহ অনেকে জানান, এ লাইনে কাজ শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায়। তবে মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় মাটির কাজ করতে দেখা গেছে। এক সময়ে পুরো কাজ বন্ধ ছিল। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসায় পুনরায় আবার দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে। জ


গেন্দ্র নামের একজন বলেন, ঠিকাদার কোম্পানি এখন রাতদিন কাজ করছে। এলাকার বয়স্ক লোকজনের দাবি তারা যেন মরার আগে পুনরায় এ রেললাইন চালু দেখে যেতে পারেন।


কালিন্দ রেল লিংকিং সুপারভাইজার বজলুর রহমান বলেন, স্লিপার ও রেলস্ট্রেক বসানোর কাজের অগ্রগতি হয়েহে।


কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনবাস প্রকল্পের সহযোগী পরিচালক রহুল আমিন বলেন, ৫১ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন