পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চাঁদপুরের ২ কলেজ

১ দিন আগে
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে ও গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত একমাস ধরে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা ও কর্মসূচির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অপরদিকে, গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ কলেজের মূল ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার সহধর্মিণী ডা. আনোয়ারা হককে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয়। গোপনে তাকে এমন পদে মনোনীত করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গৌরি রানী সাহা। এতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে গত ১৭ নভেম্বর সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপির একটি অংশ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।

 

এ সময় বিক্ষুব্ধদের হাতে কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছনার শিকার হন। এছাড়া কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার যন্ত্রাংশ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়ে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

 

ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন সকালে কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গেটে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন। একই সময়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় হাতাহাতি হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতি কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কলেজের পাঠদান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।

 

আরও পড়ুন: নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে মারধরে দশম শ্রেণির ৭ ছাত্রকে টিসি

 

অপরদিকে, গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় যুবদল নেতা মাহবুব মোর্শেদ কচিকে সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষ হরিপদ দাসকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিএনপির অপর একটি গ্রুপের নেতা ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ ও তার অনুসারীরা।

 

এদের মধ্যে কচি বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদের এবং ডা. আজাদ উপজেলা বিএনপি নেতা এমএ হান্নানের অনুসারী।

 

গত ১৭ নভেম্বর অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব মোর্শেদ কচি সভার ঘোষণা দিলে আজাদের লোকজন কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন কচিকে ইউএনও অফিসে আসতে বলেন। কচি উপজেলা পরিষদে প্রবেশকালে বিএনপি নেতা ডা. আজাদের লোকজন তাকে তুলে নিয়ে অপহরণের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে মাহবুব মোর্শেদ কচি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে ডা. আজাদ ও তার লোকজন তাকে অপহরণের চেষ্টা করেছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন।

 

আরও পড়ুন: আবাসিক হোটেলের সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল যুবকের মরদেহ

 

এদিকে, বিএনপি নেতা এমএ হান্নান ও সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদ গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কঠোর অবস্থান এবং তাদের মারমুখী পরিস্থিতিতে কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা চিন্তা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হন। উপজেলায় স্বনামধন্য দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ হওয়ার খবরে অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাঠদান না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে অনেকেই বিষয়টি দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবি জানান।

 

শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে কথা হয় গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হারুনুর রশিদ ও গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) গৌরি রানী সাহার সঙ্গে। তারা দুজনই জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

 

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। এটি খুবই দুঃখজনক। এই ধরনের কলেজগুলোর কমিটি যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেখে, আমি তাদের বলেছি, কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তবে এর বাইরে অন্য কোনো অভিযোগ থাকলে আইনি সহযোগিতা নিতে পারেন।’

 

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন