পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি, রাশিয়ার ‘ডেড হ্যান্ড’ আসলে কী

১ সপ্তাহে আগে
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা হলেও কোনো শান্তি আসেনি। উল্টো এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের নেতাদের মধুর আলাপন রূপ নিয়েছে বাগযুদ্ধে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে এখন ভিন্ন পথে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ভারতসহ রাশিয়ার বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোকে বাড়তি শুল্ক চাপানোর হুমকি দেন তিনি।

 

যার তাৎক্ষণিক জবাব দেন রাশিয়ার সাকে প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ। রহস্যময় একটি শব্দ ব্যবহার করে হুঁশিয়ারি দেন পরমাণু যুদ্ধের। যে হুঁশিয়ারি ঘিরে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

 

দিমিত্রি মেদভেদেভের হাড় হিম করা হুঁশিয়ারির সঙ্গে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার জলসীমার কাছে দুটি কৌশলগত পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। যে নির্দেশকে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন অনেকে।

 

কিন্তু নাটকীয়তা এখানেই থেমে থাকেনি। পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে মস্কোর তরফ থেকেও। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোভিয়েত যুগের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির (আইএনএফ) বিধিনিষেধগুলো মানতে বাধ্য নয় মস্কো।

 

কী বলেছিলেন দিমিত্রি মেদভেদেভ? 

 

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে সময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে রাশিয়ার হাতে ‘আর মাত্র ১০ দিন সময়’ আছে। এর মধ্যে তারা যুদ্ধবিরতিতে আসবে না হলে তারা ও তাদের থেকে যারা তেল কেনে তারা অতিরিক্ত শুল্কের মুখে পড়বে।

 

পরদিন গত বুধবার (৩০ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। তাতে তিনি লেখেন, ‘ভারত ও রাশিয়া- এই দুই দেশের অর্থনীতিই মৃত। দুই দেশের মধ্যে কী বোঝাপড়া হয়েছে, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তারা এক সঙ্গে মৃত অর্থনীতি নিয়ে রসাতলে যেতে পারে।’

 

তিনি আরও লেখেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুবই কম। ওদের শুল্কহার বেশ চড়া। পৃথিবীর সর্বোচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য হয় না বললেই চলে। অতএব ও নিয়ে না ভাবলেও চলবে।’ 

 

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেল রাশিয়া!

 

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ট্রাম্পের এই মন্তব্যের জবাব দেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ। 

 

এক টেলিগ্রাম বার্তায় ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত ও রাশিয়ার ‘মৃত অর্থনীতি’ নিয়ে কথা হচ্ছে। (ভারত ও রাশিয়ার অর্থনীতির কথা না ভেবে) হয়ত তার উচিত তার প্রিয় সিনেমা ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর কথা স্মরণ করা। সেই সঙ্গে তথাকথিত ‘ডেড হ্যান্ড’ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়টিও ট্রাম্পের স্মরণে রাখা উচিত।’

 

মেদভেদেভের এই বক্তব্যে দারুণ চটে যান ট্রাম্প। ওই বক্তব্যকে তিনি ‘বোকামিপূর্ণ ও উসকানিমূলক হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন। এবং এরপরই তিনি রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

 

ডেড হ্যান্ড কী, কীভাবে কাজ করে? 

 

ডেড হ্যান্ড হলো একটি আধা স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যা শীতল যুদ্ধের সময় তৈরি করা হয়েছিল। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি দেশের পারমাণবিক অস্ত্র চালু করতে পারে। যদি সেই দেশটির সামরিক নেতৃত্ব ধ্বংস হয়ে যায় বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তারপরও কাজ করতে সক্ষম এই ডেড হ্যান্ড।

 

ডেড হ্যান্ড ব্যবস্থা পেরিমিটার সিস্টেম বলেও পরিচিত। এটি সোভিয়েত আমলের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যা ১৯৮০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল। এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, যদি রাশিয়া সামরিক নেতৃত্ব বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সব পথ বন্ধও হয়ে যায়, তাহলে ডেড হ্যান্ড নিজে নিজে সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে।

 

এর মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আঘাতেই যদি রাশিয়ার শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, তবুও যেন প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক হামলা নিশ্চিত করা যায়।

 

আরও পড়ুন: মস্কো-ওয়াশিংটন উত্তেজনা: বাড়ছে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা

 

এই ব্যবস্থাটি ভূকম্পন, আলো, তেজস্ক্রিয়তা ও বাতাসের চাপ মাপার সেন্সরের মাধ্যমে পারমাণবিক হামলা শনাক্ত করতে পারে। সেন্সর যদি পারমাণবিক বিস্ফোরণ শনাক্ত করে এবং শীর্ষ কমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে এই ‘ডেড হ্যান্ড সিস্টেম’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

 

শান্তির সময় এই সিস্টেম সাধারণত নিষ্ক্রিয় রাখা হয় এবং শুধুমাত্র চরম সংকটময় মুহূর্তে এটি সক্রিয় করার কথা। সম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, এটি এখন সম্পূর্ণ কার্যকর রয়েছে। প্রয়োজনে রাশিয়া এটি সক্রিয় করতে পারে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন