এক কূল ভাঙা অন্য কূল গড়া-এইতো নদীর ধর্ম। কিন্তু যখন এই স্বাভাবিক নিয়মের পেছনে যুক্ত হয় কিছু মানুষের অর্থলোভ, তখন কোনো না কোনো জনপদে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ-বেদনা। এর জলজ্যান্ত সাক্ষী পদ্মার মাঝিরকান্দি পাইন পাড়া চর। শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ার মাঝখানে অবস্থিত এই চরে এক সময় ছিল লাখো মানুষের বসতবাড়ি। এসবই এখন স্মৃতি।
গত কয়েক বছর পদ্মার প্রবল ভাঙনে দুই হাজার পরিবার হারিয়েছে তাদের ভিটেমাটি ও ফসলি জমি। এখন তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রাকৃতিক ভাঙনের পাশাপাশি বড় কারণ ছিল অবৈধ বালু উত্তোলন। বহু বছর ধরে সরকারি ছত্রছায়ায় একাধিক চক্র চরের বালু উত্তোলন করে নিয়েছে তাদের সর্বস্ব। নানা দেনদরবার, সালিশ করেও মেলেনি সমাধান।
আরও পড়ুন: বসতভিটা গিলছে পদ্মা / ‘পরিকল্পিত বাঁধ থাকায় ভাঙনের কথা কল্পনাতেও ছিল না কারও’
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় বালুখেকোরা দিনের পর দিন দেদারসে বালু কেটে বিক্রি করে আসছে। শুকনো মৌসুমে বালু কাটলেও এর ফল ভুগতে হচ্ছে ভরা বর্ষায়। নদীর গতিপথ পাল্টে তৈরি হয়েছে নতুন ভাঙনের হুমকি।
চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েক দফা ভাঙনে পদ্মা সেতুর পূর্ব পাশের প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধ চলে গেছে নদীগর্ভে। ভিটেমাটি হারিয়েছেন আরও বেশ কিছু পরিবার। আতঙ্কে আছেন শতাধিক পরিবার। স্থানীয়রা বলেন, এলাকার প্রভাবশালীরা মাটি কেটে বিক্রি করতো। তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তবে এসব অভিযোগ শুনতে চান না স্থানীয় চেয়ারম্যান। তিনি অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেন খান বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। নদী ভাঙনের সঙ্গে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনের সম্পর্ক নেই। এখানে অবৈধভাবে বালু বিক্রি হয় না।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ফিরেছে তীব্র ভাঙন, আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দারা
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সাময়িক রক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হলেও অপরিকল্পিত নদীশাসন ও বালু উত্তোলন নদীর আগ্রাসন বাড়িয়ে তুলছে। জাজিরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, যারা অবৈধ ড্রেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে, তারা শুধু নিজেদের লাভের স্বার্থ দেখে। যার প্রভাব পড়ে নদী পাড়ে।
আর অভিযানে গিয়ে বালুখেকোদের হামলার শিকারের কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আক্রমণের শিকার হয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
পদ্মার ভয়াল ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজন অবৈধ বালু উত্তোলনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ, আর ভিটেমাটি হারানো মানুষদের জন্য বাস্তবভিত্তিক পুনর্বাসন। না হলে সময়ের সঙ্গে ধ্বংস হবে আরও জনপদ, ভিটাহারা হবে আরও হাজারো পরিবার।
]]>