২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি সদর উপজেলার চর আব্দুল্লাহপুর ও চাঁদপুরের মোহনপুর সীমান্তবর্তী মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে কানা জহির ও কিবরিয়া মিজি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে রিফাত (২৯) ও রাসেল (৩০) নামে দুই যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আইয়ুব আলী নামের এক শ্রমিক।
পরদিন (৩১ জানুয়ারি) ঘটনার জেরে সদর উপজেলার কালীরচর গ্রামে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলায় অন্তঃসত্ত্বা পিংকি আক্তার গুলিবিদ্ধ হন। ২০২৫ সালের ১৯ জুন সদর উপজেলার চর আব্দুল্লাহ মেঘনা নদীতে গ্রামবাসী ও ড্রেজার শ্রমিকদের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হন। এ সময় একটি ড্রেজারে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘাটে নদীর পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলনে বাধা দিলে দুর্বৃত্তরা এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে দুই দফায় প্রায় ৫০ রাউন্ড গুলি চালায়। এতে নদীতে ঝাঁপিয়ে একজন আহত হন। উত্তেজিত জনতা একটি ড্রেজার আটক করে। ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর গজারিয়ার মল্লিকেরচর এলাকায় চাঁদপুর-মুন্সীগঞ্জ সীমান্তবর্তী মেঘনা নদীতে বালুর টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে কুখ্যাত নৌ-ডাকাত বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসি নিহত হন। তিনি একাধিক জেলার বিভিন্ন থানায় ৪২টি মামলার আসামি ছিলেন।
অপরদিকে, ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর লৌহজং উপজেলার কবুতরখোলা এলাকায় কোস্টগার্ডের অভিযানে চারটি ড্রেজার ও পাঁচ শ্রমিককে আটক করা হয়। এছাড়া প্রশাসন ও যৌথবাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
আরও পড়ুন: গ্রামবাসীদের ধাওয়া খেয়ে পালাল বালু উত্তোলনকারীরা
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোটি টাকার বালু ব্যবসা ও সিন্ডিকেটের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করেই এসব সংঘর্ষের সূত্রপাত। দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং আইনের সীমিত প্রয়োগের ফলে সংঘর্ষ ও প্রাণহানি বাড়ছে।
তারা আরও বলেন, বালু মহাল ইজারা পদ্ধতিকে ডিজিটাল, স্বচ্ছ এবং নিয়মিত নজরদারির আওতায় না আনলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। পদ্মা-মেঘনার সোনালি বালু যেন নতুন করে রক্তে রঞ্জিত না হয়-স সে বিষয়ে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এসব ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন ঘিরে নানা রকম অভিযোগ এবং অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠলে গজারিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রত্যাহার করা হয়। বালু উত্তোলন নিয়ে সবশেষ বৃহস্পতিবার চর আব্দুল্লার ঘটনা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। মেঘনা তীরে এবং ডুবন্ত ফসিল জমি কাটার প্রতিবাদে ফুসে উঠে গ্রামবাসীরা। প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা না পেয়ে গ্রামবাসী হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও মাহবুবুর রহমান জানান, তার বিরুদ্ধের অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বালু খেকোদের সঙ্গে জড়িত নন।