সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের লক্ষীদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, টিফিনের সময় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী চয়ন ও মাসুম সহপাঠীদের সঙ্গে খেলা করছিল স্কুল মাঠে। স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকায় খেলার বল গিয়ে পড়ে পাশের একটি বাড়ির টিনের বেড়ায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাড়ির গৃহবধূ পপ্পু রানী। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ওই দুই শিশুকে ধরে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে গাছের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে রাখেন।
ভুক্তভোগী মাসুমের বাবা আনারুল ইসলাম বলেন, ‘এমন তুচ্ছ ঘটনায় আমার ছেলেকে বেঁধে রাখা অমানবিক। আমরা এর বিচার চাই।’
স্থানীয়রা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে একটি পক্ষ এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়শ্রী রায় ও মৌসুমী বর্মন বলেন, ‘সোমবার টিফিনের সময় বাচ্চারা খেলাধুলা করছিল। তখন বল বা ঢিল জাতীয় কিছু একটি বাড়ির টিনের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চয়ন ও মাসুমকে বাড়িতে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন এক নারী। বিষয়টি জানার পর আমরা গিয়ে শিশুদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনি। ওই নারী পরে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। আমরা জানি, বাচ্চারা একটু দুষ্টুমি করে, কিন্তু তাই বলে এমন অমানবিক আচরণ করা ঠিক হয়নি।’
শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে এক তরুণীকে হস্তান্তর ও ৯ নারী-শিশুকে পুশইন
এদিকে ঘটনার একটি এক মিনিট এক সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আরও ক্ষোভের জন্ম দেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই শিশু শিক্ষার্থী গাছের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রয়েছে এবং চারপাশে অন্য শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে আছে।
জানা গেছে, ঘটনার পর শিশু দুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে এনে সালিশ বসান। অভিযুক্ত নারী ভুল স্বীকার করলেও এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত গৃহবধূকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ ও প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা সালিশে বসি। অভিযুক্ত নারী ক্ষমা চাইলে এক শিশুর পরিবার ক্ষমা করে দেয়, অপর পরিবার ক্ষমা না করায় সালিশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এরপর কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমাদের ওপর চড়াও হয়। আমরা চাই, সুষ্ঠু বিচার হোক।’
অভিযুক্ত নারীর স্বামী কালিদাস চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে। তবে যা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমার স্ত্রী এবং পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। এখন একটি পক্ষ আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মানিক চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের একজন আংশিক প্রতিবন্ধী। তাই বলে তাকে এভাবে বেঁধে রাখা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। পুলিশ ও প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওসি নিশ্চিত করেছেন।’
]]>