সোমবার (২ জুন) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত বিচারক-২ কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সফিকুল ইসলাম (৪৬) বোদা উপজেলার কাজলদিঘী তরঙ্গীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের হামেদ আলীর ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইয়াসিনুল হক দুলাল সময় সংবাদকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ভিকটিম মমতাজ বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আদালতে এই হত্যার পরিকল্পনা ও ঘটনার যুক্তিগুলো সন্দেহাতীতভাবে তুলে ধরতে পেরেছি। আদালতের এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
আরও পড়ুন: জামালপুরে শ্বাসরোধে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা মনে করি রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৭ বছর আগে একই এলাকার আব্দুল মান্নানের মেয়ে মমতাজ বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সফিকুল। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু সুখের এই সংসারে কালো ছায়া নেমে আসে তখন, যখন সফিকুল প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে বাধা দেয়ায় পরিবারে শুরু হয় অশান্তি, কলহ। একাধিকবার সামাজিকভাবে সালিশ বসানো হলেও, অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং মমতাজের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরাও এসব নির্যাতনে অংশ নেয়।
আরও পড়ুন: স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২০১৫ সালের ৮ জুলাই রাতে সফিকুল ও মমতাজের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। সেদিন রাতেই মমতাজকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। পরদিন ৯ জুলাই সকালে নিজ ঘরে মমতাজের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা করা হলেও, পরে নিহতের বাবা আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে ১৪ জুলাই ২০১৫ সালে মোট ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকে। দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ ও শুনানি শেষে আদালত সফিকুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে আজ যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। অন্য ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন।
]]>