নেত্রকোনায় নিখোঁজ হলেই মিলছে লাশ, আতঙ্ক

৪ দিন আগে
নেত্রকোনায় নিখোঁজ হলেই মিলছে লাশ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। স্বজন হারিয়ে দিশেহারা পরিবার-পরিজন। কখনো পানিতে ভেসে ওঠে। কখনো সড়কের পাশে। পরিবার পরিজনরা গিয়ে শনাক্ত করেন আবার কখনো ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বাকি থাকে। এ অবস্থায় মানসিকভাবেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

এদিকে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, তুচ্ছ ঘটনা, সামাজিক বিরোধ, জমির দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ টাকার লেনদেনের কারণেই পরবর্তীতে ঘটছে খুনের মতো ঘটনা। 


পুলিশ বলছে, অপরাধের ট্রেন্ড ভিন্ন হয়ে পড়ায় খুনোখুনির ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে সচেতনতা ও পুলিশের তৎপরতায় কমিয়ে আনা সম্ভব।


নেত্রকোনার নাগড়া এলাকার বিকাশকর্মী রিজন নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর মিলে লাশ। গত ১১ আগস্ট তার লাশ পাওয়া যায় আটপাড়া উপজেলার মগড়া নদীতে। এর আগে তিনদিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বিকাশের টাকা তুলে বিভিন্ন এজেন্টদের কাছে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেননি। পরিবারও পায়নি তার আর কোনো খোঁজ। মোবাইল বন্ধ থাকার পর তিন দিন পর লাশ ভেসে ওঠার খবরে স্বজনরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।  

আরও পড়ুন: নেত্রকোনার হাওড়ে ভেসে উঠল অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ

কেন্দুয়ায় শামীম নামের একজন প্রায় পৌনে তিন মাস ধরে নিখোঁজ হন। তার মামলা নিতেও থানায় গড়িমসি করে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। এরপর গলে যাওয়া একটি লাশ পাওয়া গেলেও স্বজনরা শামীমের বলছেন পরিহিত কাপড় দেখে। কিন্তু পুলিশ বলছে, এটিকে ডিএনএ পরীক্ষার পর শনাক্ত করা যাবে। এভাবে দিনের পর দিন স্বজন হারারা তাদের স্বজনদের হারাচ্ছেন।


কলমাকন্দার কৈলাটির জহিরুল নিখোঁজের দুদিন পর পাওয়া গেল জহিরুলের লাশ। কেন্দুয়ায় নিখোঁজের প্রায় পৌনে তিন মাস পর পাওয়া লাশের কাপড় দেখে পরিবার শনাক্ত করলেও পুলিশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে। এভাবেই নেত্রকোনা জেলার সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রথমে খোঁজ পাওয়া যায় না, পরে একদিন দুইদিন বা কয়েকদিন পর লাশ পাওয়া যায়। এভাবে সামান্য ঘটনায় গলা কেটে, কুপিয়ে, শ্বাসরোধ করে হত্যাসহ নানাভাবে খুনের ঘটনা ঘটেই চলছে। 


জমি নিয়ে বিরোধে, পাওনা টাকা চাওয়া, অধিপত্য বিস্তারসহ গত এক মাসেই তিনটি খুনের ঘটনা ঘটে। যে কারণে স্থানীয় মানুষসহ ভুক্তভোগীদের পরিবার পরিজনে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। স্বজনরা চোখের পানি ঝরাতে ঝরাতে পথের পানে চেয়ে থাকে। কারো মা, ভাই, বোন এলাকাবাসী। কিন্তু স্বজনরা আর ফেরে না। স্বজনদের আহাজারিও থামে না। তারা চান উপযুক্ত শাস্তি। যাতে করে আর নিখোঁজের বা খুনের ঘটনা না ঘটে।

আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় গাছে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোরের মৃত্যু

সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মোহনগঞ্জের আটনায়া গ্রামে গত ২৬ মে অটোরিকশা চালক ইদু মিয়া (২৩), পূর্বধলায় ৭ মে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক রুবেল মিয়া (২৭), কেন্দুয়ায় কাঁচামাল ব্যবাসায়ী তারা মিয়াসহ (৬২) জেলার সদর, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, কেন্দুয়া, পূর্বধলার বিভিন্ন জন নিখোঁজের পরদিন মেলে লাশ। মদনের রিকশাচালক রাসেল মিয়া (২৫) অটোরিকশাচালক ৩০ জুন নিখোঁজ হলেও ৩ জুলাই কেন্দুয়া থেকে লাশ উদ্ধার  হয়। কলমাকন্দায় বিশ্বজিৎ কর ২০ জুন নিখোঁজ হয়ে পরদিন লাশ পাওয়া যায়। আগস্টের ২০ তারিখ পাওয়া যায় অটোচালক নুরুজ্জামালের (৩৮) লাশ। ১ আগস্ট নুরপুর বোয়ালি একটি লাশ ভেসে ওঠে। কলমাকান্দা ইটভাটা শ্রমিক (২৪) এর লাশ পাওয়া যায় ১৫ এপ্রিল। ১১ এপ্রিল দুর্গাপুরের শিরবির গ্রামে (৭০) খুশি বেগমের লাশসহ রেলকর্মী কাকনের লাশ পাওয়া যায় আগস্টে। 


এদিকে সম্প্রতি সামাজিক বিরোধের জেরে খালিয়াজুরী পাচহাট গ্রামেও ডুবিয়ে দেয়া হয় স্পিডবোট। পরে চারজন নিখোঁজ হলে পরবর্তীতে লাশ ভেসে ওঠে।  এভাবে গত এপ্রিল থেকে ৬ মাসে কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৫ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। জমিসহ পাওনা টাকা, সামাজিক বিরোধে চারটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে।



এদিকে নেত্রকোনা জেলা পুলিশের মুখপাত্র এডিশনাল এসপি হাফিজুল ইসলাম বলছেন, অপরাধের টেন্ড ভিন্ন ভিন্ন হচ্ছে। জিডির মধ্যে নিখোঁজের ডিডিই বেশি। এছাড়াও নানা ঘটনায় হানাহানি খুনোখুনি হচ্ছে। যা সমাজের জন্য এলার্মিং বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ চেষ্টা করছে জেলার আইনশৃঙ্খলা ভালো রাখতে। সচেতনতাবোধ ও পুলিশি তৎপরতায় সমাজের এসব অপরাধ কমে আসবে। সমাজে একটা অস্থিরতা আছে। এ অস্থিরতার কারণে এসব গুম, খুন ঘটে চলেছে। সামাজিক দ্বন্দ্ব থেকে জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ রাজনৈতিক কারণকেও দায়ী করেন তিনি। কিছু আছে নিজেরা গুম হয়। আবার কিছু আছে খুন করে ফেলে রাখে। মাদক, লোভ, বেকার সমস্যাসহ অস্থিরতা চলছে সমাজে।


তবে গণতন্ত্র না ফিরলে এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটবে না বলে মনে করছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল হক খান মুকুল। তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে না পারলে ভয়াবহ অবস্থা হবে।


জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ১০ উপজেলায় নিখোঁজের মোট ১৮০টি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। সদর থানায় ৫৪, দুর্গাপুরে ৩৪, কেন্দুয়ায় ৩৩, কলমাকান্দায় ২০, পুর্বধলায় ১৪, আটপাড়া ১০, মোহনগঞ্জ ৬, মদন ৪, খালিয়াজুরী ৪ ও বারহাট্টায় ১টি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন