ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি বলছেন, তার দেশ নেটো জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারলে রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধের, তাঁর কথায়, “উত্তপ্ত পর্যায়ের” অবসান হতে পারে।
২৯ নভেম্বর স্কাই নিউজে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে জেলেন্সকি প্রস্তাব দেন, তিনি নেটো জোটে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবেন। তবে এ ক্ষেত্রে, নেটোকে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক সীমান্তের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং এখনো অধিগ্রহণ হয়নি এমন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে সুরক্ষা দিতে হবে।
রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ অধিগ্রহণ করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ-মাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর দেশটির ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়া দখল করে রেখেছে।
জেলেন্সকি বলেন, “যুদ্ধের উত্তপ্ত পর্যায়ের অবসান ঘটাতে হলে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে নেটো জোটের সুরক্ষা বলয়ের আওতায় নিতে হবে।” তিনি আরও জানান, অধিকৃত পূর্বাঞ্চলীয় অংশটুকু পরবর্তীতে “কূটনীতিক উপায়ে” ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
এমন সময় এ বিষয়টি সামনে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি ডলার দেওয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্প আরও জানান, তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন। তার এই বক্তব্যের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে রাশিয়া যতটুকু ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করেছে, ইউক্রেনকে তা ফিরে পাওয়ার দাবি ছেড়ে দিতে হবে।
এ সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলোগকে ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষার বিষয়গুলোতে ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
ইউক্রেন যদি আলোচনার টেবিলে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন চিন্তাধারার প্রতি এর আগে সমর্থন জানিয়েছেন কেলোগ। একইসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, তিনি যদি আলোচনার টেবিলে না আসেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র “আপনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যার জন্য যা যা প্রয়োজন” তার সবই ইউক্রেনীয়দের দেবে।
গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের শহরগুলোর বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে রাশিয়া। তারা ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড-বোমার ব্যবহারে একের পর এক তীব্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকেই হতাহত হয়েছেন এবং শীত মৌসুমের ঠিক আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে।
রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের শীর্ষ বিদেশি সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ও কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা রুশ ভূখণ্ডে দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পর ইউক্রেন বেশ কয়েকবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।