নিষেধাজ্ঞা শেষে ‘মোন্থা’র ছোবল, নতুন বিপদে জেলেরা

১ সপ্তাহে আগে
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে টানা ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষের আনন্দটুকু উধাও করে দিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর এখন উত্তাল, ফলে ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিয়েও উপকূলে অলস বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন কক্সবাজার উপকূলের লক্ষাধিক জেলে। নিষেধাজ্ঞা এবং নিম্নচাপের পর এই ঘূর্ণিঝড় যেন জেলেদের জীবনে আরও বড় অনিশ্চয়তা ও হাহাকার নিয়ে এসেছে।


শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবারও (২৭ অক্টোবর) কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর ঘাট, চেয়ারম্যান ঘাট ও ফিশারিঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত ফিশিং ট্রলার নোঙর করে আছে।


দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বেশিরভাগ জেলে সামান্য সরকারি চাল সহায়তা পেলেও, বাকি দিনগুলো কেটেছে ধারদেনা করে। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়ে ইলিশ ধরে সেই দেনা শোধের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছে।


দুপুরে সরেজমিন কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর ঘাট, চেয়ারম্যান, ফিশারিঘাট ও মাঝের ঘাটে দেখা যায়, জেলেরা উপকূলে স্তূপ করা জালের ওপর বসে রয়েছেন। কারো মুখে হাসি নেই। সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আবার অনেক জেলে ও মাঝি অবস্থান করছেন দোকানপাটে। সেখানেও ধারদেনা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। তবে বেশিরভাগ জেলেকে দেখা গেছে ট্রলারের ওপর। ট্রলারে বরফ, খাদ্যসামগ্রী কিংবা ড্রাম মজুত করছেন। অনেকেই ট্রলারের মধ্যে বেকার সময় পার করছেন।
 

আরও পড়ুন: উপকূলে কখন আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা?


এফ বি লিবানের মাঝি জসিম উদ্দিন হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মাত্র ৮ কেজি চাল পেয়েছি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ, কিন্তু সাগরে যেতে পারছি না আবহাওয়া খারাপ। খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’ আরেক জেলে আব্দুল কাদেরের কণ্ঠেও একই সুর, ‘বলা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা শেষেই সাগরে গিয়ে ইলিশ ধরব, তখন বাকি পরিশোধ করব। কিন্তু এখন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মাছ শিকারে যেতে পারছি না।’


আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে এবং এটি আরও শক্তি অর্জন করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।


এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।


কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি ট্রলার সাগরে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কেউই নামতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, গত ছয় মাসে বারবার নিম্নচাপ ও দুর্যোগের কারণে জেলে ও ট্রলার মালিকরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ইলিশ ধরতে গভীর সাগরে যেতে যেখানে ট্রিপপ্রতি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়, সেখানে দুর্যোগের কারণে ট্রলার ফেরত এলে খরচের অর্ধেকটা জেলেদেরই বহন করতে হয়।


সব মিলিয়ে, নিষেধাজ্ঞার পর সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজারের লক্ষাধিক নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত জেলের জীবনে নতুন করে অভাব ও হাহাকার সৃষ্টি করেছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন